images

রাজনীতি

ভোটে ভরাডুবির পর জাপায় ক্ষোভ, হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১২ পিএম

নানা নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তে এবারের সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। সংসদের প্রধান এই বিরোধী দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতাও করে। এর বাইরে দলটি ২৮৭টি আসনে প্রার্থী দেয়। তবে ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারেনি জাপা। দলের অর্ধশতাধিক প্রার্থী ভোটের আগেই ঘোষণা দিয়ে সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলেও দলটি ভরাডুবির মুখে পড়ে। এতে জাতীয় পার্টিতে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এর জন্য শীর্ষ নেতৃত্বকে দুষছেন। তারা বলছেন, নেতৃত্বের কারণেই আজ জাতীয় পার্টির এই করুণ অবস্থা।

রোববারের (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমঝোতা হওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। আগের সংসদে থাকা ২৩ জনের মধ্যে ১১ জন বিজয়ী হতে পেরেছেন। ফলে দলটির আসন সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সমঝোতা না হওয়া কোনো আসনে দলটির প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি। এমনকি বেশির ভাগ আসনে জামানত হারিয়েছেন।

নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য জাতীয় পার্টি সরকারি দলকে দায়ী করছে। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) কথা দিয়েছিল নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস করেছিলাম। তারা সেই বিশ্বাসটা রক্ষা করেনি। ভবিষ্যতে অন্য কেউ তাদের বিশ্বাস করবে না। এটা তাদের রাজনীতি বা সর্বোপরি গ্রহণ যোগ্যতার বিপক্ষে কাজ করবে।’

আরও পড়ুন

অর্ধেকে নামল জাতীয় পার্টির আসন 

দ্বাদশ নির্বাচন ভালো হয়নি জানিয়ে ভোটের পরদিন সোমবার জিএম কাদের বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে এই নির্বাচন হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। সরকার যেখানে নিরপেক্ষ করতে চেয়েছেন, সেখানে নিরপেক্ষ হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছেন, সেটিই করেছেন। এটা নিয়েই আমরা সব সময় আতঙ্কিত ছিলাম।’

নির্বাচনে অংশ নেওয়া কি ভুল ছিল- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল কি শুদ্ধ এখনই তা মূল্যায়ন করা যাবে না। সামনের দিনগুলো দেখতে হবে। তারপর আমরা সঠিকটা বুঝতে পারব।’

দলের এমন ভরাডুবির কারণ সম্পর্কে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘আমরা কেন এত খারাপ ফলাফল করেছি তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নির্বাচন শেষে তদন্ত করে বিষয়টি দেখব।’

আরও পড়ুন

নিজ দুর্গে জামানত হারালেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা 

এদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এভাবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত হয়নি, এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতীয় পার্টির সম্পাদকীয় পদে থাকা একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমাদের নেতারা নিজেদের ফায়দার জন্য দলকে এভাবে নির্বাচনে নিয়ে শুইয়ে দিয়েছে। জাতীয় পার্টি সামনে আরও ইমেজ সংকটে ভুগবে। কারণ আমাদের ওপর থেকে জনগণের বিশ্বাস চলে গিয়েছে। জনগণ আমাদেরকে সরকারের বি টিম মনে করে।’

JUU

এত খারাপ ফল আর কখনো করেনি জাপা

বিশ্লেষকরা জানান, আশির দশকে প্রায় নয় বছর ক্ষমতায় থাকা জাতীয় পার্টি সারাদেশেই তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি মোটামুটি মজবুত করতে সক্ষম হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির পরেই এই দলের ভোট রয়েছে সারাদেশে। দলীয় নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে জাতীয় পার্টি দিনে দিনে দুর্বল হয়েছে। তবে এতটা খারাপ ফলাফল এর আগে কখনও করেনি জাপা। গত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে ছিল দলটি। গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায়ও ছিল। এবার মাত্র ১১ জন সদস্য নিয়ে সংসদে যেতে হবে দলটিকে, যা তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে লজ্জার।

এবারের নির্বাচনে যে ১১টি আসনে জাপা জয় পেয়েছে তার সব কটিই আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসন। আওয়ামী লীগের ছাড় না পাওয়া ২৩৯ আসনের মধ্যে সব কটিতেই ভরাডুবি হয়েছে। এই ২৩৯টির মধ্যে প্রায় ২২০ আসনে জামানত হারিয়েছে জাপা। গত নির্বাচনেও জাপা ১৪৬টি আসনে জামানত হারিয়েছিল।

জাতীয় পার্টির বিজয়ীরা হলেন: রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, ফেনী-৩ আসনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমান, পটুয়াখালী-১ আসনে এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মো. আশরাফুজ্জামান।

আরও পড়ুন

নৌকার ছাড় পেয়েও যেসব আসনে জিততে পারেনি জাপার প্রার্থীরা 

রংপুরকে মনে করা হয় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। সেই ঘাঁটিতেও এবার ভরাডুবি হয়েছে জাপার। রংপুর জেলায় গত নির্বাচনে দুজন জয়ী হলেও এবার জাতীয় পার্টি থেকে কেবল জিএম কাদের জিতেছেন। এছাড়া উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামেও জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান ছিল। সেখানেও দলের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে জাপা পায় ৩৫টি আসন, ৯৬ সালে দুটি আসন কমে পায় ৩৩টি। ২০০১ সালের নির্বাচনে একলাফে জাপার আসন নেমে আসে ১৪টিতে। যদিও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে জাপা ২৮টি আসন পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর অংশ নিয়ে ৩৪টি আসন পায় জাপা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপা পায় ২২টি আসন।

২০১৯ সালে মারা যান দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর থেকে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর পর প্রথম ভোটের ফলাফলে দলটির ভেতরের বিপর্যস্ত চেহারা আবার বেরিয়ে এলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেবি