জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১০ পিএম
প্রায় চার যুগ ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত এই রাজনীতিক ঝালকাঠি-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও পেয়েছেন। তবে এখনও তাকে নিয়ে আলোচনার রেশ রয়েই গেছে। দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ধাওয়ার মুখে পরে ছুটে গেছেন মিন্টু রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখান থেকে বের হলে সাংবাদিকরা ফের বিএনপিতে ফিরবেন কিনা- এমন প্রশ্ন করলে উত্তরে শাহজাহান ওমর বলেন,‘তওবা-আস্তাগফিরুল্লাহ।’
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা তার এমন দলবদলের কারণে কড়া সমালোচনা করলেও সাবেক এই আইন প্রতিমন্ত্রী একে ডিগবাজি বলতে রাজি নন। তার ভাষ্য এটি সাংবিধানিক অধিকার।
গত ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের কথা জানান শাহজাহান ওমর। এসময় তিনি নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার কথাও নিশ্চিত করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, এটাকে ডিগবাজি বলে নাকি? এটা সাংবিধানিক অধিকার, আদর্শগত ব্যাপার। সবসময় সবখানে এডজাস্টমেন্ট করা সম্ভব না-ও হতে পারে। আমি এই বৃদ্ধ বয়সে এসে মনে হলো জনগণের জন্য কাজ করি, কারণ আমার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নাই। আমার রাজনীতি করে রুটি-হালুয়া লাগে না, আমার মন্ত্রী হওয়ার দরকার নাই। আমি সব হয়েছি, এই মাটি আমাকে সব দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটা দল করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে বড় বড় রাজনীতিবিদরাও দল পরিবর্তন করে। আমি পাকিস্তান আর্মিতে ছিলাম, শপথ পাঠ করেই অফিসার হয়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় আগস্ট মাস থেকে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি।
শাহজাহান ওমর আরও বলেন, আমি বরিশাল বিভাগের কমান্ডার ছিলাম। দেশের স্বার্থে পাকিস্তান আর্মি ত্যাগ করেছি। কিন্তু আমিতো পাকিস্তান আর্মির শপথ নিয়েছিলাম, পরে তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে বেইমানি করেছি। কিন্তু জনগণের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শেখ মুজিব সরকার আমাকে বীর উত্তম খেতাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ঈমান একমাত্র আল্লাহর কাছে, বেইমানি তো ধর্মের বিষয়। রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা বেইমানি নয়।
আবারও বিএনপিতে যোগদানের সম্ভাবনা আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'তওবা-আস্তাগফিরুল্লাহ।'
সরকারের সঙ্গে আপস করে জামিন পেয়েছেন কি-না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাশিমপুরে আপস করে কেমন করে। ২৯ নভেম্বর নরমাল প্রসেসে আমার জামিন হয়েছে। ৩০ নভেম্বর তারিখে জয়েন করেছি। জামিন আমার এমনিতেও হতো। ৪ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছি, ৬ তারিখে সুপ্রীম কোর্টে জামিনের জন্য আমার আইনজীবী দরখাস্ত জমা দিয়েছিলো। কিন্তু জামিনটা হলো না। পরের তারিখে গেলাম, তখন আমার আইনজীবী আদালতকে বললেন সঙ্গের তিনজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে আমাকে কেন দেওয়া হবে না? এছাড়া, আমি চারবারের এমপি, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এজন্য আদালত আমাকে জামিন দিয়েছে।
নাশকতার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, মামলা হতেই পারে, আমিতো ২৮ অক্টোবর ঘটনার দিন মঞ্চে ছিলাম। এটাতো অস্বীকার করতে পারি না। তাই নাশকতামূলক যেকোনো মামলা হতেই পারে। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পেলে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে, বিচারের কাঠগড়ায় পাঠিয়ে দেবে।
ঝালকাঠিতে নিজের নির্বাচনী আসনে সমাবেশে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মিস আন্ডারস্টেন্ডিং ছিলো। আমার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে, সেটা সেদিন অনিচ্ছাকৃতভাবে সঙ্গে ছিলো। আমার সঙ্গে যারা ছিলো তারাও সঙ্গে গেলো। এছাড়া, এটা ফরমাল মিটিংও ছিলো না। সেদিন আমি শুধু সবাইকে বলেছি, দল পরিবর্তন করা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি, আমার সঙ্গের সবাই এখন আওয়ামী লীগে। সামনে একসঙ্গে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করব।
এর আগে ডিবিতে আসা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, কোর্ট থেকে এখানে এসেছি একটা ব্যক্তিগত কারণে। আমি আগে বিএনপি করতাম, এখন আওয়ামী লীগে জয়েন করেছি। এরপর থেকে আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। আমার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী এমনকি আমার জুনিয়র আইনজীবীর ফোনে ফোন করে নানান কথা বলা হচ্ছে। সেই বিষয়টিই হারুন সাহেবকে জানাতে আসলাম।
বিইউ/এমএইচএম