জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৯ পিএম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয় সেজন্য শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবুও যেন কমছে না সংসদ সদস্য কিংবা নতুন মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের আচরণবিধি ভাঙা। ইতোমধ্যে কয়েকজন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীকে সতর্ক করা হয়েছে। শোকজও করা হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই তালিকা লম্বা হচ্ছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনে যেন নিয়ম ভাঙার হিড়িক পড়েছে সর্বত্র। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর নিয়েছেন ফুলেল সংবর্ধনা।
অবশ্য আগেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজা নাজ নীরা সংসদ সদস্যকে আচারবিধি মানার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। নেতাকর্মী ও দলবল নিয়ে দশমিনা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফুলেল সংবর্ধনা নেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার ভাগিনা এস এম শাহজাদা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুলের মালা গলায় অনুষ্ঠানস্থলে দেখা গেছে সংসদ সদস্যকে। ঢাকা মেইলের হাতে আসা ভিডিওতে দেখা যায় প্রখর রোদের মধ্যে মালা গলায় দাঁড়িয়ে আছেন নৌকার প্রার্থী। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকা এবং সংসদ সদস্যের পক্ষে স্লোগান দেন।
শনিবার (০২ ডিসেম্বর) রাতে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজা নাজ নীরা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগেই সংসদ সদস্যকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তার দলের নেতাকর্মীরা রীতিমত মঞ্চ তৈরি করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংবর্ধনার মতো অনুষ্ঠান করে। এ ধরণের কাজ করতেও বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছিল।’
ভোটের আগে নিয়ম অনুযায়ী এমন সংবর্ধনা নেওয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সতর্ক করার পর হয়তো অতিউৎসাহী লোকজন এমনটা করেছে। পরে সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর এটা তার প্রথম সফর ছিল।’
অবশ্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে খোদ সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়ে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন বলেছেন, ২৯ ও ৩০ নভেম্বর সারাদেশে নমিনেশন পেপার জমা দেওয়া নিয়ে মিছিল-মিটিং হয়েছে। দেশের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মিছিল-মিটিং হয় নাই। আর শোকজ আমি খাইলাম, সাকিব আল হাসান খাইল।
নিয়ম অনুযায়ী, তফশিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধির আওতায় পড়ে যান সবাই। সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ ও এর সংশোধনী (২০১৩) অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌ-যান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে মিছিল করা যাবে না কিংবা কোনো শোডাউন করা যাবে না; মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও মিছিল কিংবা শোডাউন করা যাবে না।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদাকে টেলিফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
আর দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিনকেও একাধিকবার ফোন করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন। তবে এরা দুজনও ফোন ধরেননি।
বিইউ/এএস