নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগ কিছু আসন ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
৭ জানুয়ারিকে ভোটের তারিখ ধরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।
নির্বাচনে দলের প্রার্থী দিতে চার দিন ধরে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। পরে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ২৯৮ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। গত রোববার ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে ২৯৮ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সেখানে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা ও মিরপুর) এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ (বন্দর উপজেলা ও নারায়ণগঞ্জ সদরের অংশ) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসন কুষ্টিয়া-২ এ আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা না করলেও ১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের আসন (ঢাকা–৮) এবার এক নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় শরিকরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন শ আসনেই তার দল প্রার্থী দেবে। তবে নির্বাচনী আসন নিয়ে জোট সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা হবে। সমঝোতা হলে কিছু আসন ছেড়েও দেওয়া হবে।
জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কারা কারা প্রার্থী সেটা আমরা দেখি। আমাদের হাতে কিন্তু সময় আছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। সেই পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যে আমরা অবজার্ভ করব, মনিটর করব, এডজাস্টমেন্ট করব। ডেমু প্রার্থীদের ব্যাপারেও বিষয়টা এরকমই। ১৭ তারিখের মধ্যে সবকিছু ফাইনালাইজড হয়ে যাবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছে। এর মধ্যে আমাদেরও একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে। সে সিদ্ধান্তের জন্য ১৭ তারিখ পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যেই আমরা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন, সংযোজন একুমুডেশন সব কিছু করতে পারি।’
একেক আসনে একেক কৌশলে আওয়ামী লীগ যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের কৌশল তো থাকবেই। আমাদের কৌশলগত দিক তো থাকবেই। আমরা ইলেকশন করছি, আমরা একটা রাজনৈতিক দল আমাদের কৌশলগত দিক তো থাকবেই।
নির্বাচন নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও সিইসির মন্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে মন্তব্য করছে। বিদেশি বন্ধুরাও এখানে পরিস্থিতি অবজার্ভ করছে। ইতোমধ্যে ১০০ পর্যবেক্ষক আসবে এমন আভাস আমরা পাচ্ছি। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। এখানে নানা মানুষের নানা মত থাকবেই। আমাদের টার্গেট হলো একটা পিসফুল, ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন করা। ইলেকশন চলাকালীন বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কথা বলতে পারে। এখন আল্টিমেটলি আমরাও একটা পিসফুল ইলেকশন দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই যে আমরা ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। তারপর অনেক সমালোচনায় হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।
‘এখনো অনেকে সমালোচনা করছেন। অনেকে স্পেকুলেশন করছেন, জল্পনা কল্পনা করছেন। এসব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে যখন নির্বাচনটা সুন্দরভাবে হয়ে যাবে। আর সিইসি কী বলছেন সেটা আপনি সিইসিকে জিজ্ঞেস করুন। সিইসি স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সিইসির মন্তব্যের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।-বলেন কাদের।
জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটা কথা বলি, আমরা ৩০০ আসনেই নৌকার প্রার্থী দেব। অ্যাডজাস্টমেন্ট যখন হবে তখন ছেড়ে দেব। কোনো অসুবিধা নেই।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনি প্রথমেই নেগেটিভ ভাবছেন কেন? পজিটিভও থাকতে পারে। পরে আমরা যখন ডিসিশন নেব, তখন আপনি দেখবেন আমরা কী ডিসিশন নেই। সেটার ওপর আপনি মন্তব্য করতে পারেন। এখন বিষয়টাকে আমরা নাবোধকভাবে দেখব কেন? ঘটনাটা ঘটে যাক, তারপর আমরা কমেন্ট করব।’
বিএনপির কেউ কেউ নির্বাচনে আসতে পারে। এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুনেছি কেউ কেউ আসতে পারেন। কেউ কেউ প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নির্বাচনের। সেটাতো জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ৩০ তারিখ। কাল বাদে পরশু। এর মধ্যেই তো পরিষ্কার হয়ে যাবে কারা আসলেন। সবকিছু দেখে আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করব।’
আরও পড়ুন
প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ব্যাপারে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের যে আচরণবিধি আছে সে আচরণবিধি কেউ যেন লংঘন না করে। সবাইকে আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য, বিশেষ করে কাল-পরশু জমা দেওয়ার ব্যাপার আছে, এখন সেখানে একটা শোডাউন করে গেদারিং করে যেটা নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির পরিপন্থী এমন কিছু করা যাবে না।
কারই/এমআর