মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে ইসলামি দলগুলো। ফিলিস্তিনসহ নানা ইস্যুতে রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশেই মাঠে নামছে বিভিন্ন ইসলামি দল। বিশেষ করে শুক্রবার এলেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিভিন্ন ব্যানারে মাঠে নামতে দেখা যায় তাদের। দেশের বেশির ভাগ ইসলামি দলের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ ইসলামি জোটের কথা শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে আসতে পারে বৃহৎ ইসলামি জোটের ঘোষণা। থাকতে পারে নতুন চমক। ভেদাভেদ ভুলে সব ইসলামি দল এক প্লাটফর্মে এলে তা রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ আলেম-উলামাদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বড় শোডাউন করে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস। গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বড় সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশে বক্তারা মামুনুল হকের মুক্তি চেয়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেন। অভিন্ন দাবি উচ্চারিত হয় অন্যান্য ইসলামি দলের নেতাদের মুখেও।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে ফের সরব হচ্ছে হেফাজত!
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক- এই দাবিতে আমরা মাঠে-ময়দানে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও আমাদের দলের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেম-উলামাদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আমরা সারাদেশেই মিছিল-মিটিং করে যাচ্ছি। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যদি আমাদের দাবি পূরণ হয় এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। দেশের যেসব প্রধান রাজনৈতিক দল আছে সেগুলো থেকেও প্রপোজাল আমরা পাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমরা তাদের সাথে জোটে যাচ্ছি না। আমাদের অবস্থান থেকে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে যুগপৎ আন্দোলন করছে তাদের দাবি-দাওয়া ও আমাদের দাবি প্রায় কাছাকাছি। আমরা আমাদের প্লাটফর্ম থেকে আমাদের আন্দোলন করছি। জোটে আমরা এই মুহূর্তে যাচ্ছি না।’
নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে বৃহৎ জোটের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইসলামি দলগুলো মিলে একটা জোটের কথাবার্তা চলছে। একাধিক বৈঠক হয়েছে। আমরা অনেকটা চিন্তার কাছাকাছি পৌঁছেছি। আগামী নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে আমরা একসাথে মিলে নির্বাচন করতে পারি কি না, এই বিষয়টা নিয়ে সিদ্ধান্তের কাছাকাছি রয়েছি।’
আরও পড়ুন: নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে হেফাজতের আলটিমেটাম
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে একসময়ের বিএনপির জোটসঙ্গী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বৃহৎ জোটের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটল রয়েছি। এই দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি এবং করে আসছি। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো জোটে নাই। নির্বাচনমুখী দল হিসেবে, প্রাচীনতম দল হিসেবে আমরা সবসময় নির্দলীয় সরকার চাই। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ইসলামি দলগুলো মিলে একটা জোটের বিষয়ে বসা বা কথাবার্তা চলছে। এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই-চার দিনে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও তফসিল ঘোষণা হলে এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে।’
প্রায় একই অবস্থার কথা জানিয়েছে দেশের আরেকটি ইসলামি দল এবং বিএনপির একসময়ের জোটসঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত নই। ইসলামি দলগুলো মিলে একটা জোটের কথাবার্তা চলছে। সেটা পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত হবে।’
গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতির মাঝে বেশ সক্রিয় রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসহ নানা ইস্যুতে রাজধানীতে বড় বড় শোডাউন করতে দেখা যায় দলটিকে। সম্প্রতি রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছে দলটির যুব ও ছাত্র শাখা। আগামী ৩ নভেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকেছে চরমোনাই পীরের দল। পরিবেশ তৈরি হলে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।
আরও পড়ুন: সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মহাসমাবেশ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামি বৃহৎ জোটের আলোচনায় মুখ্য ভূমিকা রাখছে এই সংগঠনটি। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ূম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাব না। আমাদের দাবি জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্দলীয় বা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে একটি বৃহৎ ইসলামি জোট হতে পারে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’
সরাসরি রাজনৈতিক দল না হলেও ইসলামি রাজনীতিতে বড় প্রভাব রাখে কওমি মাদরাসাভিত্তিক আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সম্প্রতি ২০২ সদস্যের বিশাল কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে সংগঠনটি। প্রায় দুই বছর ধরে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া হেফাজতে ইসলামকে নতুন করে আলোচনায় আনতে চাচ্ছেন বর্তমান কমিটির নীতি-নির্ধারকরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবার সরব হতে চায় আলোচিত এই সংগঠনটি।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। নির্বাচনমুখী দেশ হলেও এখনো নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়নি। নির্বাচন কমিশন এখনো তফসিল ঘোষণা করেনি। নির্বাচন সামনে চলে এলে কী হয় না হয় বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনের পরিবেশ শুরু হলে আমিরে হেফাজত অবশ্যই একটা ঘোষণা দেবেন দেশ-জাতির জন্য। কারণ দেশে যেন একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যেন অক্ষুণ্ন থাকে, দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি যেন না হয়, দেশের সম্পদের যেন ক্ষতি না হয়- এ ব্যাপারে আমি মনে করি তিনি অবশ্যই একটা দিকনির্দেশনা দেবেন।’
আরও পড়ুন: শাপলা চত্বরের ঘটনার ১০ বছর, সরকার-হেফাজত সম্পর্ক কোন পর্যায়ে?
অপরদিকে নিবন্ধন হারালেও দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামি দল হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর। বৃহৎ ইসলামি জোট হলে সেখানে তাদের কী অবস্থান হবে তা জানা যায়নি। তবে যাদের নেতৃত্বে বৃহৎ জোটের আলোচনা চলছে তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আদর্শগত বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধ ভুলে রাজনৈতিক মাঠে তাদের মধ্যে সমঝোতা হবে কি না সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।
টিএই/জেবি