দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
২৮ অক্টোবর ২০২২, ১১:২৬ এএম
সড়কের ময়লা পড়ে থাকছে সড়কেই। তাও আবার ছাই হয়ে। সড়ক পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশন থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য একত্র করে সড়কেই তা পুড়িয়ে ছাই করে রাখছে। প্রতিদিন সকালে বা রাতে সড়ক ও আশপাশের পড়ে থাকা ময়লা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে এমন করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদীরা।
বর্জ্য পোড়ানো প্রসঙ্গে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজের সুবিধার জন্য এবং ঝামেলা কমাতেই তারা এমন কাজ করছেন। অপসারণ না করেই রাতে এসব বর্জ্য প্রায়ই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছেন এ কর্মীরা।
এতে দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠে আশপাশের পরিবেশ। নাগরিক ভোগান্তির পাশাপাশি হারাচ্ছে বসবাসের উপযোগিতা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বর্জ্য পোড়ানোর এই কাজটি দক্ষিণ সিটিতে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে বলে স্থানীয়রা জানান।

পরিবেশবাদীরা জানান, এতে অগ্নিঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি, মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হবে। সেই সাথে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দেখভালে ঘাটতিকেই দায়ী করছেন তারা। পরিচ্ছন্নকর্মীদের সচেতন করার পাশাপাশি এর ক্ষতি প্রসঙ্গে জানানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
ঢাকা মেইলের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার হাজারীবাগ, নবাবগঞ্জ, লালবাগ, আজিমপুরসহ মোহাম্মদপুরের কিছু অংশে নিয়মিত পোড়ানো হয় সড়কের বর্জ্য।
আরও পড়ুন: বিলাসী ব্যয়ে ভূগর্ভে এসটিএস স্থাপনে আগ্রহী ডিএনসিসি
তিন এলাকার অন্তত দশ জন পরিচ্ছন্নকর্মীর সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তাদের দাবি, বর্জ্য পোড়ানো যাবে না মর্মে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা নেই তাদের কাছে। পরিচ্ছন্নকর্মীদের দেওয়া বক্তব্য বিশ্লেষণ করে অনুমেয়- বর্জ্য পোড়ানোর ক্ষতি নিয়ে তারা সচেতন নন।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলেছেন, নির্দেশনার আলোকে কাজ করছেন। সড়কে তৈরি হওয়া বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার চেয়ে পুড়িয়ে ফেলাই সহজ ও নিরাপদ। কারণ, এখানকার অধিকাংশ বর্জ্য প্লাস্টিক। সরাতে গেলে ঝামেলা বাড়ে, সিটি করপোরেশনের গাড়িতে তুলে দিতে হয়। আর পোড়ানো হলে যেখানের ময়লা সেখানেই শেষ!

ইউসুফ নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, ময়লা পোড়ানো হয় মূলত ঝামেলা কমাতেই। যে পরিমাণ ময়লা বা প্লাস্টিক মানুষ রাস্তায় ফেলেন, তার চেয়ে বেশি ফেলে আশপাশের দোকানিরা। তাই শর্টকাট পথ সড়কের ময়লা সড়কেই পোড়ানো।
তৈরি হওয়া ধোঁয়ায় পথচারীরা বিরক্ত হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ইউসুফ বলেন, কেউ কেউ আমাদের ওপর বিরক্ত হয়। আমাদেরই বা কি করার আছে? আগেও পোড়াতাম, এখনও পোড়াই।
প্রতিনিয়ত ময়লা পোড়ায় ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় বিরক্ত নুরে জান্নাত নামে এক পথচারী। তিনি নিয়মিত আজিমপুর কবরস্থান সামনের সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আগুনের স্তূপ থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মাস্ক পরে ধুলোবালি থেকে বাঁচা যায়, কিন্তু এ ধোঁয়া থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই?
আরও পড়ুন: কূটনৈতিক পাড়ায় ময়লার ভাগাড়!
নুরে জান্নাত বলেন, কোথাও কোথাও তো নিশ্বাসও নেওয়া যায় না। একদিকে ধুলোবালি, অন্যদিকে ধোঁয়া। যেন এদের দেখার বা বলার কেউ নেই।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বায়ু দূষণের শীর্ষে ঢাকা শহর। সর্বত্র এখন বর্জ্য পোড়ানো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্টেনসহ বিপদজনক জ্বালানির ব্যবহার করা গাড়ি থাকে সড়কে। বর্জ্য পোড়ানোর ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সেই সাথে অন্যান্য ক্ষতি তো আছেই।

এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনের জোট ‘বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের’ (এনসিএ) আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে নিন্মস্তর বা খারাপ পদ্ধতি হলো পোড়ানো। অনেকেই অসচেতনতার কারণেই এটি করে থাকনে। যা রাজধানীর সড়কে করা হচ্ছে। রাজধানীর ছাড়াও বিভাগীয় শহরেও এমন বর্জ্য পোড়ানোর রীতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্জ্য পোড়ানোর ফলে যে নিজেদেরই ক্ষতি তা জানাতে হবে, জানতে হবে। একই সাথে এটি একটি অপরাধ তাও অনুধাবন করতে হবে। এছাড়াও এভাবে আগুন দিয়ে প্লাস্টিক বা পাতা পোড়ানোয় এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। যাতে বায়ু দূষণ হয়। এই বায়ু দূষণ বনের গাছ-পালা, কীটপতঙ্গসহ মানুষরে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ায়। এসব সার্বিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষের খেয়াল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈমকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
ডিএইচডি/এএস