নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ এএম
ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল আর স্লোগানে রাতভর উত্তাল ছিল রাজধানীর শাহবাগ মোড়। শুক্রবার রাত পেরিয়ে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোর হলেও এখনো শাহবাগে অবস্থান করছেন হাদি ভক্তরা। তারা এ চত্বরে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি খুনি ফয়সাল করিমকে হাজির করার দাবিতে এখানে অবস্থান নেন ছাত্রজনতা।
এর আগে, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার পর ইনকিলাব মঞ্চের নেতৃত্বে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রজনতা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন তারা। এ সময় শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
‘বাংলাদেশের আজাদি, ওসমান হাদি’ ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘বাংলাদেশের পতাকায় হাদি তোমায় দেখা যায়’ ‘ইনসাফের পতাকায় হাদি তোমায় দেখা যায়’, ‘তাকবীরের ধ্বনিতে হাদি তোমায় দেখা যায়’, ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর’, ইত্যাদি স্লোগান দেন অবরোধ কর্মসূচিতে আসা ছাত্রজনতা।
এসময় বিক্ষোভ মিছিলকারীরা বলেন, হাদির হত্যার প্রধান আসামিকে হাজির করতে হবে। সেইসঙ্গে যথাযথ বিচার করতে হবে। সব খুনীকে হাজির না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
অবরোধ কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, সরকারের উপদেষ্টারা শাহবাগে এসে জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে জবাব না দেওয়া পর্যন্ত তারা এই স্থান ছাড়বেন না। প্রয়োজনে জীবন দিয়েও এই অবস্থান ধরে রাখার কথা জানান তিনি।

নানা অভিযোগ তুলে সদস্য সচিব বলেন, ‘এই জমিন শহিদ ওসমান হাদির রক্তে ভিজেছে। অথচ এখন কেউ কেউ এসে আমাদের নির্দেশ দিতে চায়, এই কাজ করো না, ওই কাজ করো না। আমরা দেখছি, আপনারা ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে হাজিরা দেন। আমাদের আর উপেক্ষা করা চলবে না।’
শহীদ ওসমান হাদির রক্তের বিচার আদায়ের দাবিতেই তারা রাজপথে নেমেছেন জানিয়ে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের উপদেষ্টারা জনগণের সামনে এসে জবাবদিহি না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়ব না। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যত দিন আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে না পারবে এবং একজন নারী যত দিন হিজাব পরে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে না পারবে, তত দিন প্রকৃত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে না।’

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয় নগরে নির্বাচনি প্রচারণার সময় পরিকল্পিতভাবে ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ওসমান এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়; সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: বিদ্রোহী কবির পাশে চিরঘুমে ওসমান হাদি
পরে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হাদির লাশ দেশে আনা হয়। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে উপস্থিত হন লাখ লাখ ছাত্রজনতা। জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হয়।
এমআই