মাহফুজুর রহমান
২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম
হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজধানীতেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে। রাতের পাশাপাশি দিনের বেলাতেও কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও উড়ালসড়কের নিচে দেখা মিলছে এসব মানুষের। শীতবস্ত্র, নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে তাদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে চরম অনিশ্চিত ও কষ্টকর।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢাকার বাতাসে শীতের তীক্ষ্ণ ছোবল অনুভূত হচ্ছে। দিনের দুপুর ১২টার দিকেও রাজধানীতে সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে শীতের প্রকোপ কমছে না। এই শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। শহরের ব্যস্ত এলাকায় যেখানে মানুষ কোট-সোয়েটারে নিজেদের ঢেকে নিচ্ছেন, সেখানে ফুটপাতে থাকা মানুষগুলো পুরনো কাপড়, পলিথিন কিংবা বস্তা গায়ে জড়িয়ে ঠাণ্ডা ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের পাশে মেট্রোরেলের নিচে থাকা ষাটোর্ধ্ব রহিম মিয়া বলেন, ‘বয়স হয়েছে, শরীর আর আগের মতো নেই। এই শীতে রাতে ঘুমানোই সবচেয়ে বড় কষ্ট। ঠাণ্ডায় বুক ব্যথা করে, কাশি ধরে। কোনো দিন যদি একটা মোটা কম্বল জোটে, সেই দিনটা মনে হয় ঈদের দিন।’ তিনি জানান, শীত বাড়লে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় সব সময় তাড়া করে।
আজিমপুর এলাকায় থাকা শিউলি বেগম বলেন, ‘আমার সঙ্গে দুইটা ছোট বাচ্চা। রাতে ওদের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। নিজে কাঁপলেও ওদের বুকে জড়িয়ে রাখি। সাহায্য খুব কম আসে, কেউ কেউ খাবার দেয়, কিন্তু শীতের কাপড় সব সময় পাওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, এই শীতে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকাটাই বড় লড়াই।
শাহবাগে ফুটপাতে দিন কাটানো যুবক সুমন জানান, ‘শীতের সময় কাজ কমে যায়। রিকশা ঠেললেও যাত্রী পাওয়া যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠলে হাত-পা শক্ত হয়ে থাকে। একটা জ্যাকেট আর কম্বল থাকলে অন্তত রাতে একটু শান্তি পাওয়া যেত।’ তার কথায় শীতের পাশাপাশি জীবিকার সংকটও স্পষ্ট।
গুলিস্তান এলাকায় থাকা বৃদ্ধা মরিয়ম বলেন, ‘অনেক বছর রাস্তায় আছি, কিন্তু এবার শীতটা বেশি কষ্ট দিচ্ছে। শরীর দুর্বল, চোখে ঠিকমতো দেখি না। রাতে শুয়ে শুয়ে কাঁপি, কখন যে সকাল হবে সেই অপেক্ষায় থাকি।’ তিনি বলেন, ‘শীত বাড়লে খাবারের চেয়ে গরম কাপড়ের প্রয়োজন বেশি অনুভূত হয়।’
নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, অনেক ছিন্নমূল মানুষ দল বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন। এতে একদিকে শীত থেকে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও পথচারীদের দেওয়া পুরনো কাপড়ই তাদের একমাত্র ভরসা।
শীত যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। মানবিক উদ্যোগ ও সংগঠিত সহায়তা ছাড়া এই মানুষগুলোর শীত পার করা কঠিন হয়ে উঠছে। নগরবাসী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতাই পারে এই কনকনে শীতে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে।
এম/ক.ম