নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অভিবাসন খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে। সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি এবং নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) কম্বোডিয়ার রাজধানী ফনম পেনে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে প্রথমবারের মতো ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বৈঠকে কম্বোডিয়া পুনরায় বাংলাদেশের আসিয়ান সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার আগ্রহের প্রতি সমর্থন জানায়। কম্বোডিয়ার পক্ষে এ সমর্থনের কথা জানান বৈঠকের সহসভাপতি ও দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি অব স্টেট উন খেয়াং। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক শাখার সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম।
কম্বোডিয়ান প্রতিনিধিদল আসিয়ান সেন্ট্রালিটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সঙ্গে সমষ্টিগত ও দ্বিপাক্ষিক উভয় পর্যায়ে নিয়মিত ও ধারাবাহিক যোগাযোগ বজায় রাখার পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ আসিয়ানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি) চুক্তিতে যোগদানের আগ্রহ বাস্তবায়নে কম্বোডিয়ার সমর্থন কামনা করে।
২০২০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপর্যায়ের যৌথ কমিশন বৈঠকে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে এই প্রথম এফওসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং বিদ্যমান চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ী পর্যায়ের যোগাযোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে। আগামী বছর ফনম পেনে প্রথম যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে তারা একমত হয়।
বাংলাদেশের সচিব ড. নজরুল ইসলাম দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব দেন। কম্বোডিয়ার সচিব উন খেয়াং এলডিসি উত্তরণের প্রাক্কালে উভয় দেশের বাণিজ্য অংশীদার বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন ইধিকা পাল
কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের এক হাজার ১০০টির বেশি ওষুধপণ্য তাদের বাজারে নিবন্ধিত রয়েছে। এ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পক্ষ কম্বোডিয়ায় চাল ও কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ এবং বাইব্যাক ব্যবস্থার আগ্রহ প্রকাশ করে। পাশাপাশি কৃষি ও মৎস্য খাতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক দ্রুত আয়োজনের বিষয়ে সম্মতি হয়।
কম্বোডিয়ায় নির্মাণ ও তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানায় বাংলাদেশ। দুই দেশ নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করা এবং মানবপাচার ও অনলাইন জালিয়াতি দমনে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। এছাড়া কম্বোডিয়ার শ্রম ও কারিগরি প্রশিক্ষণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য বাংলায় সচেতনতামূলক তথ্য প্রকাশ করায় ধন্যবাদ জানানো হয়।
দুই পক্ষই সরাসরি বিমান চলাচল সহজ করতে এয়ার সার্ভিসেস চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে। পাশাপাশি মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে যৌথ পর্যটন পণ্য উন্নয়নে কম্বোডিয়া আগ্রহ প্রকাশ করে।
ড. নজরুল ইসলাম রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কম্বোডিয়ান পক্ষকে অবহিত করেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়েও ধারণা দেন।
কম্বোডিয়ার সচিব উন খেয়াং থাইল্যান্ড সীমান্তে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের বিষয়ে তার দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। উভয় পক্ষই চলতি বছরের শুরুতে গৃহীত কুয়ালালামপুর যৌথ ঘোষণার আলোকে সংলাপ ও কূটনীতিতে ফেরার তাগিদ দেয়।
আগামী বছরের শেষ দিকে ঢাকায় এফওসির পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের সচিব। একই সঙ্গে ফনম পেনে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক দূতাবাস স্থাপনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রায় ৪০ সদস্যের একটি কম্বোডিয়ান প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এফওসি শেষে ড. নজরুল ইসলাম কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইট সোফিয়ার সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। সেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতি বজায় রাখতে অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত ফয়েজ মুরশিদ কাজীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এএইচ/এমআই