নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতি ও সংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতীক, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা, সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের কমুনিটি সদস্য, ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুতে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ গভীরভাবে শোকাহত।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক ড. হাসান মাহমুদ ও সেক্রেটারি সহকারী অধ্যাপক তাইয়িব আহমেদ।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘মাত্র ৩২ বছর বয়সে তার এই মৃত্যু ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রইল। এটি কেবল একজন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীর মৃত্যু নয়, এটি মূলত পতিত ফ্যাসিবাদ ও প্রশাসনের লুকিয়ে থাকা সহযোগীদের পক্ষ থেকে জুলাইয়ের প্রজন্মের কণ্ঠ স্তব্ধ করার সম্মিলিত প্রচেষ্টা যা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।’
আরও পড়ুন: কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরলেন ওসমান হাদি
‘গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত সশস্ত্র হামলার পর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার এবং আন্তরিক চিকিৎসা সত্ত্বেও তাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমরা শরিফ ওসমান বিন হাদির পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা ও শহিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। এ ছাড়া চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। তবে একইসঙ্গে আমরা বলতে বাধ্য পূর্বশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এই মৃত্যু এড়ানো যেত যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো তার নাগরিকের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত।’
তারা আরও বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, হামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীরা ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং পরিকল্পিত পলায়ন, যার পেছনে প্রশাসনিক ব্যর্থতা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক যোগসাজশ রয়েছে কি না তা রাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জাতির সামনে তুলে ধরে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
‘একজন নাগরিক, একজন শীর্ষ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মী এবং একটি আন্দোলনের মুখপাত্র এভাবে আক্রান্ত হয়ে শহিদ হওয়ার পরও যদি বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করা হয়, এবং খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে তবে তা হবে রাষ্ট্র, স্বাধীনতা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার নৈতিক পরাজয়।’
সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ দৃঢ়ভাবে মনে করে, ‘শহিদ ওসমান হাদির রক্তের দায় রাষ্ট্র কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। জুলাইয়ের সরকার হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার, নিরেপেক্ষ- গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই হবে এই শাহাদাতের প্রতি প্রকৃত সম্মান। আমরা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত উপায়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে আমাদের অবস্থান অব্যাহত রাখব। শহিদ ওসমান হাদির আত্মত্যাগ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষার সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
তাদের সুস্পষ্ট ও জরুরি দাবিগুলো
এমআর