images

জাতীয়

ডিজিটাল রূপান্তর রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া: ফয়েজ আহমদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

ডিজিটাল রূপান্তর মানে কেবল অ্যাপ বা বিচ্ছিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নয়; এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া-এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকার বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিল্ডিং ট্রাস্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি থ্রু ডেটা গভর্ন্যান্স’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

সম্মেলনের আয়োজন করে দ্য ইনস্টিটিউট অব কষ্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ইডিজিই প্রকল্প) এবং বাংলাদেশ সরকার।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘দেশের ডিজিটাল রূপান্তরকে আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এর কেন্দ্রে থাকতে হবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ। শক্তিশালী আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া টেকসই ডিজিটাল রূপান্তর সম্ভব নয়।’

তিনি জানান, দেশে একাধিক ডিজিটাল সিস্টেম চালু থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির ঘাটতির কারণে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।

বিশেষ সহকারী আরও বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে সাইবার সেফটি, ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা এবং জাতীয় ডেটা গভর্ন্যান্স-এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে। এগুলো ভবিষ্যৎ ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (ডিপিআই) মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে।’

ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিরাপদ ডিভাইস ও সমান নেটওয়ার্ক সুবিধা ছাড়া ডিজিটাল সেবা কার্যকর হতে পারে না। শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য এ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ডিজিটাল ডেটা ওয়ালেট চালু করা হবে, যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথ্য সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত থাকবে। নাগরিকের সম্মতিতেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এসব ডেটা ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। আইনি ও অবকাঠামোগত ভিত্তি ছাড়া ডিজিটাল রূপান্তর কেবল বিভ্রম-এই উপলব্ধি থেকেই সরকার সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘কার্যকর ডেটা গভর্ন্যান্স শুধু নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আন্তঃখাত সমন্বয় এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহির কাঠামো। সরকার ও বেসরকারি খাতে ডিজিটাল সেবার পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল ডেটা ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই জনআস্থা অর্জনের মূল চাবিকাঠি।’

ডিজিটাল যুগে ডেটা সুরক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের বিষয়গুলো ছিল সম্মেলনের মূল আলোচ্য। তিনটি পৃথক অধিবেশনে ডেটা সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেটা ব্যবস্থাপনার তুলনা এবং ডেটা ব্যবস্থাপনায় পেশাদার হিসাববিদদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।

সম্মেলনে সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আইন ও প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বক্তারা বলেন, সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পেশাজীবী সংগঠন ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগেই একটি আস্থাভিত্তিক ও টেকসই ডেটা গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- আইএফএসি-এর সভাপতি জ্যঁ বোকু, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেসমে এবং সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা।

এএইচ/এমআই