নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৭ পিএম
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় পুলিশ যে তরুণকে শনাক্ত করেছে, তার নাম ফয়সাল করিম মাসুদ। তার পরিচয়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বিরুদ্ধে থাকা মামলার ইতিহাস নিয়ে এখন তীব্র কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। স্থায়ী ঠিকানা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন। বাবার নাম হুমায়ুন কবির। তবে তারা আনুমানিক ৩০ বছর আগেই গ্রাম ছেড়েছে। বর্তমানে ঢাকার আদাবরের পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটিতে (বাসা নং-৪১, রোড নং-৯) বসবাস করতেন বলে পুলিশের পিসিআর রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগে আদাবরের ওই বাসা থেকে ফয়সালকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র্যাব।
ফয়সাল করিম রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তার নাম ছিল। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ‘আসনভিত্তিক সমন্বয়ক কমিটি’র সদস্যও ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: আটকের পর যা বললেন হাদির হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল মালিক
পেশাগতভাবে ফয়সাল করিম নিজেকে একজন আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে উপস্থাপন করেন। তার লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি ‘অ্যাপল সফট আইটি’, ‘ওয়াইসিইউ টেকনোলজি’ এবং ‘এনলিস্ট ওয়ার্ক’ নামক তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ও পরে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে তার আইটি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
তার মালিকানাধীন ‘ওয়াইসিইউ টেকনোলজি’ ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করে। বেসিসের সহযোগিতায় তৈরি এ গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে’
ফয়সাল করিমের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সশস্ত্র ডাকাতির মামলা রয়েছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর আদাবরের একটি অফিস থেকে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় তিনি প্রধান আসামি। ৭ নভেম্বর র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করে।
চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো- ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। মাত্র ৩ মাস ৮ দিন পর, অর্থাৎ গত ১২ আগস্ট, তার জামিনের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়। এই অল্প সময়ের মধ্যে সশস্ত্র মামলায় জামিন পাওয়াই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার আলোচনা এখন সরব।
পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ফয়সাল করিমকে শনাক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির সাথে ফয়সালের বিভিন্ন সময়ের ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকের ধারণা, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হাদিকে অনুসরণ করছিলেন।
ফয়সাল করিমের নাম হামলার সাথে যুক্ত হওয়ায় তার গ্রামের বাড়ি বাউফলে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও হতবাকভাব লক্ষ্য করা গেছে।
বর্তমানে ফয়সাল করিম মাসুদ পলাতক। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ফয়সালকে প্রধান সন্দেভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। দেশত্যাগ ঠেকাতে তার ব্যাপারে এরই মধ্যে সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্তে তথ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, তার ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এ ছাড়া তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।