images

জাতীয়

প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন এলে গণনা করা হবে না পোস্টাল ব্যালট

মো. মেহেদী হাসান হাসিব

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। তবে তফসিলের আগে আরপিওতে সংশোধন এনে বলা হয়েছে আদালতের রায়ে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন এলে ওই আসনের জমা হওয়া পোস্টাল ব্যালট গণনা করা হবে না।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর অনুচ্ছেদ ২৭ পোস্টাল ব্যালটের জন্য কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। যেমন, পোস্টাল ব্যালটে প্রতীকের বিপরীতে ক্রস বা টিক চিহ্ন না দিলে তা গণনা করা হবে না। আদালতের রায়ে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন এলে ওই আসনের জমা হওয়া পোস্টাল ব্যালটও গণনা করা হবে না। ঘোষণাপত্রে ভোটারের স্বাক্ষর না থাকলে পোস্টাল ব্যালট গণনায় নেওয়া হবে না।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত ১৯ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে, চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ভোটের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারী আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নিবন্ধন কার্যক্রম।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ পোস্টাল ব্যালট সম্পর্কে বলেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাপনা নিয়ে কমিশন সভায় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমাদের দুই ধরনের পোস্টাল ব্যালট আছেদেশের ভেতর থেকে এবং দেশের বাইরে থেকে। দেশের বাইরের ব্যালটগুলো আজ থেকে ছাপানোর কাজ শুরু করছি। আগামী পরশুদিন থেকে বিদেশে পাঠানোর কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের ভেতরে যে পোস্টাল ব্যালটগুলো আছে, সেগুলোর নিবন্ধন কাজ আমরা শুরু করব। দেশের ভেতরে তিন ধরনের ভোটার (আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, ভোটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি সরকারি কর্মচারী) পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন। তারা তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে মোট ১৫ দিন নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে তাদের কাছে ইনকান্ট্রি পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যালট পাঠানো হবে।

আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, গণভোটের কারণে আরপিওতে আবার সংশোধনী আনা হয়েছে এবং আচরণবিধিতেও ভাষাগত কিছু সংশোধন আসবে।

এর আগে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ভোটের পদ্ধতি উল্লেখ করে পরিপত্র জারি করে নির্বাচন কমিশন, যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য নিবন্ধন ভোট দেওয়ার সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, রিটার্নিং অফিসার গণনার জন্য প্রাপ্ত খাম খুলে প্রথমেই ঘোষণাপত্রটি যথাযথভাবে স্বাক্ষরযুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করবেন। যথাযথভাবে স্বাক্ষরযুক্ত না থাকলে ব্যালট পেপারের খাম না খুলেই ঘোষণাপত্রটি প্রত্যয়ন করে বাতিল বলে চিহ্নিত করে ব্যালটসহ খামটি সংরক্ষণ করবেন।

Postal Vote BD নামে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটাররা অনলাইনে আবেদন করে ভোট দিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।

বিদেশে অবস্থানরত আবেদনকারী ভোটারের তথ্য যাচাই করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে তাদের বিদেশের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে।

রিটার্নিং অফিসার প্রতীক বরাদ্দ হলে ভোটাররা অ্যাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থী তালিকা দেখে প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন।

এরপর প্রদত্ত ভোটের ব্যালট ফিরতি খামে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠাবেন।

পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধিত ভোটাররা অ্যাপের মাধ্যমে ব্যালট পেপার প্রেরণের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

ভোটদানের নিবন্ধন পদ্ধতি

() নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোটার যে দেশ থেকে ভোট দিতে ইচ্ছুক, সে দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

() পোস্টাল ব্যালট প্রাপ্তি এবং ভোট প্রদানের জন্য Google Play Store বা App Store থেকে Postal Vote BD মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড ইনস্টল করতে হবে।

() ব্যবহারকারী বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো একটি ভাষা নির্বাচন করে অ্যাপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

() আবেদনকারী নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন করবেন। OTP, Liveliness NID যাচাইয়ের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

() বিদেশে ব্যালট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নির্ভুল ঠিকানা প্রদান আবশ্যক।

পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ প্যাকেজ

অ্যাপে নিবন্ধিত সব ভোটারের কাছে পর্যায়ক্রমে ব্যালট পেপার পাঠাবে ইসি।

নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধিত ভোটারদের প্রদত্ত ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালটসহ খাম পৌঁছে যাবে।

খাম পেয়ে ভোটার Postal Vote BD অ্যাপে লগইন করে খামের ওপর দেওয়া QR কোড স্ক্যান করবেন, এতে সিস্টেমে ব্যালট শনাক্ত হবে।

ভোটাররা যে খামটি পাবেন, তার মধ্যে থাকবে একটি পোস্টাল ব্যালট, ভোটের নির্দেশাবলীসহ একটি কাগজ, একটি ঘোষণাপত্র এবং রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানাসহ একটি ফেরত খাম।

যেভাবে ডাকযোগে ব্যালট যাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে

() ব্যালট পেপারে সব প্রতীক মুদ্রিত থাকবে এবং প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘর থাকবে।

ভোট দেওয়ার আগে ভোটার ঘোষণাপত্রে ব্যালট পেপারের ক্রমিক নম্বর, ভোটারের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখে স্বাক্ষর করবেন।

নিরক্ষর বা অক্ষম ভোটার অন্য একজন বৈধ ভোটারের সাহায্যে পূরণ সত্যায়ন করবেন।

ঘোষণাপত্র ছাড়া ব্যালট পেপার বৈধ গণ্য হবে না।

() প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটাররা অ্যাপ বা ইসির ওয়েবসাইটে প্রার্থী তালিকা দেখতে পারবেন এবং প্রতীকের পাশে টিক বা ক্রস চিহ্ন দেবেন।

অ্যাপে ভোটদান পদ্ধতির ভিডিও টিউটোরিয়াল থাকবে।

() ভোট চিহ্নিত করার পর ব্যালট পেপারটি ছোট খামে রেখে খাম বন্ধ করবেন। এরপর ব্যালট সংবলিত খাম স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্র বড় (ফেরত) খামে ঢুকিয়ে ডাকযোগে পাঠাবেন।

খাম বন্ধে সেলফঅ্যাডহেসিভ থাকবে এবং ডাকমাশুল সরকার পরিশোধ করবে।

() ভোট পাঠানো থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় অ্যাপের মাধ্যমে ব্যালটের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

 

রিটার্নিং অফিসারের ব্যালট গ্রহণ সংরক্ষণ

রিটার্নিং অফিসার প্রাপ্ত খামগুলোর QR কোড স্ক্যান করে রেকর্ড রাখবেন, যা সফটওয়্যার থেকে জেনারেট হবে।

অবৈধ (ঘোষণাপত্রবিহীন) খাম বাতিল বলে সংরক্ষণ করা হবে।

বৈধ ঘোষণাপত্রযুক্ত খামগুলো গণনার জন্য নির্ধারিত বাক্সে রাখা হবে।

 

পোস্টাল ব্যালট গণনা

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গণনা কক্ষ প্রস্তুত থাকবে।

প্রার্থী, এজেন্ট, গণমাধ্যম পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকতে পারবেন।

রিটার্নিং অফিসার সফটওয়্যারে লগইন করে পোস্টাল ব্যালটে পাওয়া মোট ভোটের চিত্র দেখতে পারবেন।

 

ব্যবস্থা অনুযায়ী ব্যালট গণনা হবে

() ব্যালট খাম খুলে ব্যালটগুলো বের করে প্রার্থীভিত্তিক আলাদা করে গণনা করা হবে।

() অস্পষ্ট বা বুঝে না আসা ব্যালট বাতিল করা হবে।

() ফলাফল লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করা হবে।

() সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে প্রাপ্ত ব্যালট খাম সংরক্ষণ করা হবে এবং সংখ্যা প্রকাশ করা হবে।

গণনা শেষে সাধারণ কেন্দ্রের মতোই পোস্টাল ব্যালটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে চূড়ান্ত ফলাফলে একীভূত করা হবে। পোস্টাল ভোটের হিসাব একীভূত না করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা যাবে না।

ইসি জানিয়েছে, অ্যাপে নিবন্ধনকারীদের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট ডাকযোগে পাঠানো হবে। ভোটার ভোট দিয়ে ফিরতি খামে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

এমএইচএইচ/এআর