নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
রাজধানীর মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের খিচুড়িতে আধা ইঞ্চি লোহার পেরেক পাওয়া গেছে। খাবারের সাথে এমন পেরেক পাওয়ার ঘটনায় অল্পের জন্য জীবন বাঁচলো ভোক্তাদের।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে এমন ঘটনা ঘটে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, খাসির মাংসের ভুনা খিচুড়ি খাওয়ার এক পর্যায়ে প্লেটে হাফ ইঞ্চি লোহার পেরেক পাওয়া যায়। তবে, পেরেক হাতে লাগায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তারা।
ভুক্তভোগীরা মনে করেন, শুধু ক্ষমা চাওয়া বা বিল মওকুফ করা কোনোভাবেই দায়মুক্তির উপায় নয়। তারা দাবি জানান, যে সকল নামি রেস্টুরেন্ট অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ খাবার পরিবেশন করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো বড় দুর্ঘটনা না ঘটে।
ভুক্তভোগী সভিন বলেন, সন্ধ্যার পরে মতিঝিলে কিছু কেনাকাটা শেষে খিচুড়ি খাওয়ার জন্য আমরা সাড়ে সাতটার দিকে ঘরোয়া হোটেলে যাই। ২৯০ টাকা করে দু’টি খাসির মাংসের ভুনা খিচুড়ি অর্ডার করি। আমার প্লেটে চার-পাঁচ লোকমা খাওয়ার পর খিচুড়ির ভেতর কাঠির মতো কিছু একটা চোখে পড়ে। পরে দেখি সেটা লোহার অর্ধ ইঞ্চি পেরেক। একটুর জন্য গলায় ঢুকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত। এমন ঘটনা দেশের পুরনো ও নামিদামি রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে অকল্পনীয়। আজ আমরা ছিলাম, কিন্তু আমাদের জায়গায় যদি কোনো শিশু বা অল্পবয়সী কেউ খেতে আসত, তাহলে সে পেরেকটি গিলে সরাসরি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ত।
আরেক ক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি কর্মচারীকে জানালে সে ভিডিও করতে নিষেধ করে। উল্টো বলে- এরকম দুর্ঘটনা হতেই পারে, আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না। পরে তারা খাবার বদলে দিতে চায় এবং বারবার ঘটনাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা ভয় দেখিয়ে বলে, ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্টকে বদনাম করবেন না। আমরা বললাম, খাদ্যের মধ্যে পেরেক পাওয়া কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং অবহেলা। কিন্তু তারা কোনোভাবেই দায় নিতে চাইল না।
ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলার ম্যানেজার মো. আব্দুল্লাহ ঘটনাটিকে ‘দুর্ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা লাকড়ির চুলায় রান্না করি। সেখান থেকে দুই-একটা পেরেক চলে আসতেই পারে। বিলও নিইনি, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। এ সময় ম্যানেজারসহ একাধিক কর্মচারী ভুক্তভোগীদের ভিডিও করতে বাধা দেন এবং বিষয়টি বাইরে না ছড়ানোর জন্য বারবার অনুরোধ করেন।’
এদিকে খাবারের মান, নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেন, এ ধরনের ঘটনা রেস্টুরেন্টটির দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার প্রমাণ।
ঘরোয়া হোটেলের স্বত্বাধিকারীর ছেলে আরিফুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘ঘটনাটি যদি ঘটে থাকে, অবশ্যই এটি অপরাধ। খাবারের মধ্যে পেরেক থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি পুরোপুরি জেনে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘ওয়েবসাইটে লিখিত অভিযোগ দাখিল হলে তদন্তের মাধ্যমে মালিকপক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে। প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
একেএস/এমআই