images

জাতীয়

মোহাম্মদপুরে যুবক হত্যা: আসামিদের চেনেন না মামলার বাদী ও নিহতের বাবা!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

  • পুলিশের অভিযানে দুইজন গ্রেফতার
  • পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ছেদ
  • আহতরা বলছেন ভিন্ন কথা

ঢাকার মোহাম্মদপুরে রাসেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের কাউকেই চেনেন না নিহতের বাবা ও মামলার বাদী। তার দাবি, তিনি পুলিশের কথায় নামগুলো দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো— তাহলে কে তাদের নামগুলো পুলিশকে দিল?

গত শনিবার রাতে নবীনগর হাউজিংয়ের চার নম্বর রোডের পশ্চিম পাশের মাথায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রাসেল। সে সময় তার সঙ্গে থাকা বিপ্লব ও রিয়াদ নামে দুজন আহত হন। তাদের একজন একটি সরকারি হাসপাতালে, আরেকজন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রাসেলকে মামলার এজাহারে একজন মুরগি ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তার বাবার দাবি, তিনি একটি কোম্পানির গাড়ি চালক। রাসেল ওই এলাকায় ভাড়া বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ঘটনার রাতে তিনি অফিসের গাড়ি চালিয়ে সেখানে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময়ই তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

মঙ্গলবার বিকেলে মামলার বাদী ও নিহতের বাবা আফসার আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, রাসেলের কখনো কারও সঙ্গে এলাকায় পূর্ব শত্রুতা ছিল না। সে ড্রাইভিং করে, অফিসে যায় সকাল সাতটায়। রাতে আটটার দিকে চার নম্বর রোডে গাড়ি বন্ধ করে চা খেত ও আড্ডা মারত।

মামলার এজাহারে যে সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের কাউকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাউকেই চিনি না। যারা ঘটনার দিন আমার ছেলের সঙ্গে আহত হয়েছে এবং এখন হাসপাতালে আছে, তাদেরও চিনি না। পুলিশ আমাকে আটক দুইজনকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, এদের চিনেন কিনা? আমি বলেছি না। আমি তাদের নামও জানি না, তাদের কাউকেই চিনিও না।

তবে তার ভাষ্য, তার ছেলের সঙ্গে যারা এই ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। তার দাবি, আসামি ও আহত ব্যক্তিদের কাউকেই তিনি চেনেন না।

জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পর রাসেলের বাবা মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য মেহেদী হাসান বাবু ওরফে পেপার বাবু (৩১), মোবারক (২০), ইমরান (২২), গাজী (২২), চকলেট রাব্বি (২০), জিহাদ (২১) ও ফয়সালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

মেয়ের পড়াশোনা শেষ হলে ছেলেকে নিয়ে গ্রামে ফেরা হলো না!

রাসেলের পরিবার জানিয়েছে, রাসেল ও তার বোন ঢাকায় থাকত। এই সুবাদে গত এক বছর ধরে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন তারা। নিহতের বোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। সেই কারণে পরিবারটি গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করে। পাশাপাশি নিহত রাসেলও একটি কোম্পানির গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করছিলেন। পরিবারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল, মেয়ের পড়াশোনা শেষ হলে সবাই আবার গ্রামে ফিরে যাবেন। কিন্তু হলো না।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে বাসায় ফেরার পথে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

আক্ষেপ করে নিহত রাসেলের বাবা আফসার আলম বললেন, আমরা ওই এলাকায় এক বছর হলো গেছি। আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার পড়াশোনা শেষ হলে গ্রামে চলে যাব— এই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই তো আমার ছেলেটা চলে গেল। এখন কাকে নিয়ে গ্রামে যাব?

নিহত রাসেলের বাবা ফার্মগেট এলাকায় ব্যবসা করেন। সকালে বের হন এবং রাতে বাসায় ফেরেন। এই তাদের দৈনন্দিন রুটিন। ফলে গত এক বছরেও সেই এলাকায় কারও সঙ্গে তার বা তার ছেলের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি বলে দাবি তার।

পুলিশ যা বলছে:
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুল ইসলাম জুয়েল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছি। তারা গ্রেফতার আছে। বাকিদের খোঁজা হচ্ছে, তবে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, আহত বিপ্লবের সঙ্গে পূর্ব দ্বন্দ্ব ছিল। ফলে তাকে মারতে গিয়ে রাসেল সেখানে থাকায় মারা পড়েছে। ওই সময় রাসেল বিপ্লবের পাশে থাকায় কোপটা তার ঘাড়েই পড়ে, এতে তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা ওই এলাকার চিহ্নিত আসামি। তাদের প্রত্যেকের নামে কমবেশি একাধিক মামলা রয়েছে।

এমআইকে/এআর