images

জাতীয়

এবারের নির্বাচনে বড় হুমকি এআই

মো. মেহেদী হাসান হাসিব

০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

  • প্রচারে নিষিদ্ধ এআই'র ব্যবহার
  • অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান
  • বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ্বে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে কোন কোন বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে সেগুলো নিয়েও ভাবছে ইসি। এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইর ব্যবহার এবারের নির্বাচনে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই হুমকি ঠেকানোর সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে এখনই ভাবছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আরপিও, আচরণবিধিসহ নয়টি আইন সংশোধন করা হয়েছে। ভোটের প্রচারে এআইর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ও ফেক কনটেন্ট ঠেকাতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাও অব্যাহত রেখেছে ইসি। সংস্থাটি মনে করছে, এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। শুধু নির্বাচন কমিশনের চেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে ইসি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রচার হবে অনলাইনে। যেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকার কারণে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে প্রচার করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়া নির্বাচনের আগে থেকেই উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াকে মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, এআই জেনারেটেড ফেক বা ডিপফেক এগুলো কন্ট্রোলের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালায় এআইর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই এআইয়ের ব্যবহার বাড়বে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একজন আরেকজনের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়াতে পারে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আরও পড়ুন

এবারের ভোটে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা

অপতথ্যের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ের আহ্বান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সঠিক তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন এবং প্রতিটি ভোটের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠায় সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।

Vote2
পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ইদানীং একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সময়ে দেখা দিয়েছে। সে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহারসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ। মিথ্যা ভিডিও, বানোয়াট তথ্য নিয়ে ভিডিও, অপতথ্য নিয়ে ভিডিও এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার আবেদন থাকবে, যেকোনো তথ্য বিশ্বাস করার আগে আপনারা দয়া করে যাচাই করে নেবেন। পাওয়া মাত্রই এটা বিশ্বাস করে শেয়ার করবেন না। শেয়ার করার আগে যাচাই করে নেবেন।

সিইসি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য ছড়ানোর যে অপপ্রয়াস এটার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লড়াইয়ের আহ্বান জানাই। যাতে আমরা সবাই মিলে এটার মোকাবেলা করতে পারি।

তিনি জানান, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে হুবহু বক্তব্য নকল করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

প্রচারে নিষিদ্ধ এআই'র ব্যবহার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহারকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার ফলে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালায় এআই'র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

জানা গেল নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ!

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা এআই’র অপব্যবহারের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। অসুবিধাটা হলো মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ম্যালইনফরমেশন। আমি একটা উপাত্ত পেলাম, ভেরিফাই করলাম না সত্য নাকি মিথ্যা, আমি শেয়ার শুরু করলাম। এটা হচ্ছে মিসইনফরমেশন। ডিসইনফরমেশন হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে করা। অর্থাৎ একটা মিথ্যা কথা অসৎ উদ্দেশে আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি। আর ম্যালইনফরমেশন হচ্ছে যেটা সত্য কথা, কিন্তু আমার ছড়ানোর কথা না, আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি। এই তিনটার মধ্যে এখন বিশেষ করে ডিসইনফরমেশন, যেটা এআই ব্যবহার করে বেশি হয়।’

বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ

নির্বাচনের সময়ে ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তিকর ছবি ও এআইনির্ভর কনটেন্টের প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা গেলে ভুয়া খবর প্রতিরোধ সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Vote3
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ্বে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন সাইবার প্রযুক্তির বিষয়ে বলেন, বর্তমানে প্রচুর ভুয়া তথ্য, ভুল তথ্য, ফেক ইমেজ এবং এআইনির্ভর বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচনের সময় এগুলোর প্রভাব আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে সতর্ক করছেন। এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, বিশেষজ্ঞ ও রিসোর্স ব্যবহার করলে তারা নিশ্চয়ই সহায়তা করতে আগ্রহী হবেন। এতে ফেক নিউজ ও এআই–নির্মিত ভুয়া কনটেন্ট প্রতিরোধ করা সহজ হবে।

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালট সংরক্ষণ নিয়ে জটিলতা!

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এবারের নির্বাচনের ক্যাম্পেইন ৮০ শতাংশ হবে অনলাইনে। সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু নির্বাচন হওয়ার আগে থেকেই অনেক উত্তেজনা তৈরি করে ফেলবে। সেই ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াকে মিসইনফরমেশন বলেন আর ডিসইনফরমেশন বলেন কিংবা এআই জেনারেটেড ফেক, ডিপফেক বলেন, এগুলো কন্ট্রোল করতে হবে।

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, আমরা তো জানি এখানে অন্তত একটা শক্তি তো থাকবে, যারা নির্বাচন কন্ট্রোল হলে খুশি। হয়ত সেই জায়গায় এই টেকনোলজি সোশ্যাল মিডিয়ার মতো পাওয়ারফুল, সেটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেটা কন্ট্রোল করতে পারেনি। এক্ষেত্রে ঢাকা বা স্থানীয় পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে মানুষকে ফ্যাক্ট চেকিং, সচেতন করতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ সবারই সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।

এমএইচএইচ/জেবি