images

জাতীয়

ঢাকা ছাড়তে চান অনেক পুলিশ, আবেদনের হিড়িক

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম

# এক বছরে আবেদন পড়েছে ৫০ হাজারের বেশি।
# মামলার আসামি হওয়ার ভয়ও অনেকের আবেদনের কারণ।
# সন্তানদের পড়াশোনার অজুহাতে বদলির আবেদন বেশি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের আগে পুলিশের কাছে ঢাকায় বদলি হওয়া ছিল অনেকটা ‘সোনার হরিণের’ মতো। মফস্বল থেকে ঢাকায় আসার জন্য অনেকে নানা চেষ্টা করতেন। কিন্তু বর্তমানের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এখন ঢাকা ছাড়তে চাইছেন অনেক পুলিশ সদস্য।

আরও পড়ুন: পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ বেপরোয়া অপরাধীরা

কত সংখ্যক পুলিশ সদস্য বদলির জন্য আবেদন করেছেন এ নিয়ে কোনো কর্মকর্তা স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। তবে পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সদর দপ্তরের বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্ধলক্ষের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এখনো প্রতি সপ্তাহে হাজারের বেশি আবেদন পড়ছে পুলিশ সদর দপ্তরে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। যৌক্তিক মনে হলে বদলি অনুমোদন দিচ্ছে সদর দপ্তর।

ঢাকা ছাড়তে চাওয়ার কারণ কী?

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর গাইবান্ধা থেকে ঢাকার একটি থানায় বদলি হন আয়নাল হক (ছদ্মনাম)। সেই সময় থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত থানাতেই দায়িত্বে পালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ আবেদন করলে তাকে বদলি করা হয় পুলিশ সদর দপ্তরে। সেখান থেকে সম্প্রতি রংপুরে বদলি করা হয় এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।

ঢাকা মেইলকে আয়নাল জানান, ঢাকায় পরিশ্রম বেশি, আয় কম। তার ভাষায়, আমাদের এসআই-এএসআইয়ের বেতন-সুবিধায় ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা অনেক কষ্টকর। বিশেষ করে যারা সৎ পুলিশ সদস্য, তাদের জন্য মফস্বলই ভালো। বাসা ভাড়া, বাচ্চাদের পড়াশোনা-সব খরচ তুলনামূলক কম।

থানার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নাজমুল আলম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘জেলায় ডিউটি আর ঢাকার ডিউটি আসমান-জমিন তফাৎ। ঢাকায় পরিবারকে সময় দেওয়া যায় না। তাই আবারও জেলায় ফেরার জন্য আবেদন করেছি।

একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, ঢাকায় পরিশ্রম ও ডিউটি সময় বেশি হওয়ায় পরিবারকে সময় দেওয়া যায় না। এছাড়া অনেকে মামলার আসামি হতে পারেন এমন ভয়েও ঢাকা ছাড়তে চাচ্ছেন। অনেকে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ঢাকায় ডিউটিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন পুলিশ সদস্যও উপজেলা পর্যায়ে বদলির আবেদন করেছেন।

অধিকাংশ আবেদনে বাচ্চাদের পড়াশোনা, বাসা ভাড়ার চাপ ও পারিবারিক ঝামেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ঢাকার বাইরে শান্ত পরিবেশে চাকরি করতে চান।

প্রটোকল ও বাড়তি সুবিধা কম

ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় আগে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রটোকল দিতে হতো পুলিশকে। এতে বাড়তি সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা পেতেন অনেকে। এখন সেই প্রটোকল ও বাড়তি আয় নেই।

এছাড়া শেখ হাসিনার আমলে অবৈধ উপার্জন করা অনেক পুলিশ সদস্য ঢাকা ছাড়তে চাইছেন। কেউ কেউ আগের আয়-উপার্জনের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন। তাই উপজেলা শহরে গিয়ে ‘নিভৃতে’ চাকরি করতে চান তারা।

এ বিষয়ে পুলিশের ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বদলি হওয়ার জন্য পারিবারিক এবং নানা কারণে পুলিশ সদস্যরা আবেদন করে থাকেন। তবে এর বাইরে অন্য কোনো কারণে তারা আবেদন করছেন কি না, তা আমার জানা নেই। আর বদলি হওয়ার জন্য যে কেউ আবেদন করতেই পারে।’

বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএমপিতে আবেদন আসার পর তারা ফরওয়ার্ড করেন। কতজন ডিএমপি থেকে বদলি হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’

এমআইকে/এমআর