মো. মেহেদী হাসান হাসিব
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪১ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আদালতের দৃষ্টিতে ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য রাখার বিধান যুক্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আরপিওতে যোগ্যতা-অযোগ্যতায় আগে ব্যক্তি কোনো অপরাধের কারণে সাজা পেলেই কেবল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হতেন। তবে নতুন এ বিধানের ফলে মামলার রায় ঘোষণার আগে শুনানিতে অনুপস্থিতির দায়ে আদালত কাউকে পলাতক ঘোষণা করলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। এছাড়া অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধানও তুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থী বা তার প্রস্তাবকারী/সমর্থনকারীকে সশরীরে রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, কয়েকবার বৈঠক ও আরপিও কাটাছেঁড়া করার পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) খসড়া চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও, সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ ভেটিং জন্য মঙ্গলবার পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এলে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সরকারের অনুমোদন পেতে তা উপদেষ্টা পরিষদ সভায় উত্থাপন হবে। সরকারের সায় পেলে রাষ্ট্রপতি তা সংশোধন অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করবেন।
নির্বাচন কমিশনার আব্দর রহমানেল মাছউদ বলেন, সমভোটে লটারি প্রথা বাদ দিয়ে পুননির্বাচন, শুধু একক প্রার্থিতায় ‘না’ ভোট, অনিয়ম হলে পুরো আসনে ভোট বাতিল, জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করা, ঋণখেলাপি হলে ভোটের পরেও সদস্য পদ বাতিল, প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটের নিবন্ধনসহ ছোটোখাটো তিন ডজনেরও বেশি প্রস্তাব রয়েছে।
প্রার্থী হতে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের সুপারিশ রাখা হয়নি বলেও তিনি জানান।
একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের বিধানে ‘ডামি’ প্রার্থী বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে সেখানেই ‘না’ ভোট হবে। একক হলে হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যেত আগে, আমরা বলছি এখন ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের বিষয়ে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ রাখতে আইনে সংশোধন আনার প্রস্তাব রয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের শুধু নাম থাকবে, প্রবাসে থেকে নিবন্ধন করলেই আসন, ভোটার এলাকা চলে আসবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের তত্ত্বাধান থাকবে।
যত সংশোধনের প্রস্তাব ইসির
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও কোস্টগার্ড যুক্ত।
ইভিএম: সব প্রভিশন বাতিল।
কর্মকর্তাদের জবাবদিহি: অবহেলায় শাস্তি সুনির্দিষ্ট; ৩ দিনে তদন্ত শেষ করে ইসিকে জানাতে হবে।
‘না’ ভোট: শুধু একক প্রার্থীর আসনে প্রযোজ্য; বিনাভোটে নির্বাচিত নয়।
পর্যবেক্ষক-সংবাদকর্মী: অনুমতিপ্রাপ্তরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
ফল বাতিল/স্থগিত: পুরো বা আংশিক আসনে বাতিল/স্থগিতের ক্ষমতা পুনর্বহাল।
আচরণবিধি ভঙ্গ: শাস্তির বিধান যুক্ত।
সংবাদকর্মী: ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে হবে।
সমভোট: লটারির পরিবর্তে পুনঃনির্বাচন হবে।
প্রচার: শুধু ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার করা যাবে; অন্যান্য আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ।
ব্যয়ের অডিট: আরও কঠোরভাবে নিরীক্ষা করা হবে।
দলীয় অনুদান: ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা; ব্যাংক ও আয়কর রিটার্নে বাধ্যতামূলক।
বদলি: পুলিশ-প্রশাসনের বদলিতে রেঞ্জ ডিআইজি অন্তর্ভুক্ত।
এআই-ভিত্তিক মিথ্যাচার: প্রার্থী, দল ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
দলীয় নিবন্ধন: নাকচ হলে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত কারণ জানাতে হবে।
নিবন্ধন স্থগিত: দলের কার্যক্রম স্থগিত/নিষিদ্ধ হলে নিবন্ধনও স্থগিতের বিধান।
হলফনামায় মিথ্যা: নির্বাচিত হওয়ার পরও ৫ বছরের মধ্যে প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল ও এমপি পদ খারিজ হতে পারে।
প্রিজাইডিং অফিসার: ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে; ভোটে প্রভাব খাটালে শাস্তির বিধান।
তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুষ্ঠু ভোটে ‘সার্টিফিকেট’ দেওয়া, ইসির জবাবদিহিতা সংক্রান্ত কিছু সংস্কার সুপারিশ ইসির প্রস্তাবে থাকছে না।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপও বলা হয়েছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনি সংস্কার চূড়ান্ত হবে।
এমএইচএইচ/জেবি