মাহাবুল ইসলাম
০২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে উৎসব। ঈদ মানে অফুরন্ত খুশির ফোয়ারা। আর এই ঈদ আনন্দ ফোয়ারায় সবচেয়ে বেশি মেতেছে শিশুরা। সবার শৈশবের ঈদ আনন্দই সমৃদ্ধ হয়ে থাকে বাবা-মায়ের অফুরন্ত ভালোবাসার স্পর্শে। শিশুর আনন্দ-খুশিতে আলোক ঝরনাধারা বয়ে আনে মা-বাবা। সে চিত্রই আবারও ধরা দিলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মাঝে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) চিড়িয়াখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু মায়ে কোলের শিশুই নয়, পাঁচ-ছয় বছরের দুরন্ত শিশুও ঈদ আনন্দ উদযাপনে মেতেছে বাবার কাঁধে, মায়ের কোলে। আবার কেউ মায়ের কাঁধে, বাবার কোলে। আবার এক সন্তান কাঁধে তো অন্যজন কোলে।
কেউ সন্তানদের কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ দেখাচ্ছেন চিড়িয়াখানার জীব-জন্তু। কেউ আবার সন্তানকে কাঁধে নিয়ে জ্যাম ঠেলছেন। বাড়ি ফেরার তাড়ায় সন্তানকে কাঁধে নিয়ে কেউ কেউ দৌড়াচ্ছেনও। বাবা-মায়ের কোলে-পিঠে-কাঁধের এ ভালোবাসায় ঈদ আনন্দ অফুরন্ত উচ্ছ্বাসে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রতিটি শিশুর হৃদয়।
নতুন পোশাকে প্রতিটি শিশুই তাদের বাবা-মায়ের কাছে রাজপুত্র-রাজকন্যা। তবে চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়ছিল পরীর সাজে কন্যা শিশুদের। একেকজন যেন বেহেশতের ফুল। যে ফুলের সৌরভে মুখরিত পুরো চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরিবারের সঙ্গে সেই স্মৃতিময় মুহূর্ত উপভোগে মেতে উঠেছিলেন সবাই।
শিশুরা যেমন নিষ্পাপ তেমনি পবিত্র। হাজারো মানুষের ভিড়ে দৃষ্টিনন্দন ফুলের মতোই বাবা-মায়ের কাঁধে বসে বসে আনন্দ উদযাপন করা শিশুরা সবার নজর কাড়ছিল। খুশির আগুনে যেন স্ফুলিঙ্গ তৈরি করছিল বাবা-মায়ের প্রতি শিশুদের আলিঙ্গন।
একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত মোহাম্মদ নাসরুল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা তো খুব বেশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি না। বছরের একটা দিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর তীব্র ইচ্ছে থাকে। কিন্তু প্রতি বছর সে সুযোগটিও হয়ে উঠে না। আর যখন হয়ে উঠে তখন আনন্দ-খুশির আর কোনো বাঁধ থাকে না। আমার মেয়ে আমার কলিজা। ওকে কাঁধে নিয়েই পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরে ঘুরে দেখছি। ও যখন আমার সঙ্গে দুষ্টমিতে মেতে উঠে বাবা ডাকছে, তখন যে প্রশান্তি অনুভব করছি, তা মুখের ভাষায় প্রকাশ করা কোনো বাবার পক্ষেই হয়ত সম্ভব হবে না।
ঘুরতে আসা সন্ধ্যা নামে এক নারী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা পুরো পরিবার ঘুরতে এসেছি। আমার কোলে এটা আমার বোনের মেয়ে। অনেক কিউট। আসলে আমার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হলো। স্বামী বিদেশে আছে। আমার বাচ্চা নেই। বোনের মেয়েটাই আমার মেয়ে। ওর মুখ দেখলে আমার সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই।
শামীম কবির নামের আরেক দর্শনার্থী ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদ আসলে শিশুদের জন্যই। যে পরিবারে শিশু আছে, সে পরিবারে বেহেশতের আবহ থাকে। চিড়িয়াখানায় এসে প্রাকৃতির সৌন্দর্য ও জীবজন্তুর চেয়ে বেশি নজর কাড়ছিল একেকটা জান্নাতি ফুলের মায়ামাখা দুষ্টমি দেখে।
শিশুর এই অনাবিল আনন্দ বাবা-মায়ের মনেও খুশির জোয়ার আনে। সন্তানের খুশি দেখে তারাও তৃপ্ত হন। তাদের মুখেও ফোটে হাসি। তাই প্রত্যেক বাবা-মা তার শিশুসন্তানকে আনন্দ উপভোগ করার ব্যবস্থা করে দিতে পেরে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে সন্তানের ঈদ আনন্দকে আরও বেশি সমৃদ্ধি ঘটাতে প্রাণন্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাবা-মা।
আরও পড়ুন
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, কোনো বাবা-মা তার সন্তানকে এদিনে দূরে রাখতে চান না। আর চিড়িয়াখানায় দেখা যায়, শিশুরা খেলাধুলা করতে করতে চোখের আড়াল হয়ে যায়। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ২৫ জন শিশু এভাবে বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে গেছিল। পরে যখন তারা সন্তানদের কাছে পায়, সেই যে ভালোবাসার দৃশ্য। সেটা না দেখলে বোঝা যাবে না।
এমআই/জেবি