images

জাতীয়

অভিযানেও আতঙ্ক কাটছে না মোহাম্মদপুরবাসীর

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম

  • স্পট বদল করেছে ছিনতাইকারীরা
  • বিকেল-সন্ধ্যায় বেশি ঘটনা ঘটছে
  • এখনও অধরা কয়েক শত কিশোর অপরাধী 

গত ৫ আগস্টের পর ডাকাত আতঙ্কে ভুগেছে মোহাম্মদপুরবাসী। মাঝে সেই ডাকাতির আতঙ্কে ভাটা পড়েছিল। কিন্তু এখন নতুন আতঙ্ক হয়ে সামনে এসেছে ছিনতাই ও চাপাতি গ্রুপ। রাস্তাঘাট, অলিগলি এমনকি দোকানে ঢুকেও অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ জানালেও তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। 

যদিও পুলিশ বলছে, আতঙ্কের কিছু নেই। অভিযান চলমান। আরও গ্রেফতার হবে। তবে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই গ্রুপকে এক রাতে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। এজন্য পুলিশকে সময় দিতে হবে। 

অভিযোগ করে বিপাকে ভুক্তভোগী

সম্প্রতি নবোদয় বাজারের এক ফার্মেসিতে ঢুকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে ক্যাশে থাকা টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। এরপর পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু গ্রেফতারের পরদিনই গত ২৮ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন যুবক আবারও ওই ফার্মেসিতে যায় এবং মালিককে হুমকি দিয়ে আসে। এ ঘটনার পর থেকে সেই দোকানি আতঙ্কে আছেন। 

আরও পড়ুন

‘হয় তারা থাকবে, অথবা আমরা’—ছিনতাইকারী ইস্যুতে মোহাম্মদপুরের ওসি

তবে বিষয়টি ইতোমধ্যে জেনেছে পুলিশ। তারা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছে বলে জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ শাহরিয়ার হাসান। 

IMG_20241030_170348_copy

যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি

বুধবার বিকেলে বছিলার চল্লিশ ফিট এলাকায় কথা হচ্ছিল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক রাব্বীর সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, এইতো এক সপ্তাহ আগেও এখানে আসা যেতো না। বিশেষ করে বিকেলে একা থাকা যেতো না রিকশা নিয়ে। কিন্তু এখন সেই ভয় নেই। তারপরও ভয় লাগে বসিলার কিছু সড়কে। ওয়ানপিস নামে ওই এলাকায় একটি গার্মেন্টস আছে। সেই এলাকার রাস্তাগুলো নিরিবিলি। ফলে বিকেল ও সন্ধ্যার পর সেই এলাকার রাস্তাগুলোতে বেশি ছিনতাই হয়। তার কথার সূত্র ধরে সেই ওয়ানপিস গার্মেন্টসের দিকে যাওয়ার সময় দেখা হয় শরীফ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। যিনি রাজধানীর একটি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি গত সাত বছর ধরে আছেন এই এলাকাতে। 

শরীফ বলছিলেন, ছিনতাইগুলো সন্ধ্যার পর বেশি হয়। তাদের হাতে থাকে বড় বড় ধারালো অস্ত্র। অভিযানের পর একটু কমেছে। তবে পুরোদমে কমেনি। এখন বিকেল বেলা বলে বের হয়েছি। কিন্তু সন্ধ্যা হলে বাসার বাইরে বের হতাম না। 

একটু এগিয়ে বসিলা মেট্রো হাউজিংয়ের সড়কের মাঝামাঝি সেই গার্মেন্টসের দেখা মিললো। যেখানে প্রতিদিন কাজ করেন প্রায় দেড়শ শ্রমিক। তারা কাজ শেষ করে চলে যান রাত নয়টার দিকে। এরপর সেই এলাকা সুনসান হয়ে যায়। জনশূন্য রাস্তাঘাটে তখন নেমে পড়ে কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাইকারীরা। তবে তাদের উৎপাত কিছুটা কমেছে বলে জানালেন একটি বাসার কেয়ারটেকার রফিকুল। তিনি বলছিলেন, আমরা সন্ধ্যার পর বাসায় ঢুকে পড়ি এবং সকাল সাতটা না হওয়া পর্যন্ত আর গেট খুলি না। 

আরও পড়ুন

চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাঠানো কঠিন, তবে সম্ভব: হেলেন লাফেভ

সেখান থেকে চল্লিশ ফিট সড়কে এসে জানা গেল, কয়েকদিন আগেই একটি মুদি দোকানে অস্ত্র ঠেকিয়ে সন্ধ্যার পর ডাকাতি হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। দোকানে থাকা সব টাকা-পয়সা তারা লুট করে নিয়ে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে সেই দোকানি বেশি কিছু বলতে চাননি। পরে এলাকাবাসী জানান, সড়কটি কাঁচা হওয়ায় সন্ধ্যার পর যানবাহন কম চলাচল করে। আর এই সুযোগটি নেয় ছিনতাইকারীরা। 

IMG_20241030_171638_copy

বসিলা ব্রিজের পূর্ব পাশের মোড়ে কথা হচ্ছিল কলেজ ছাত্র আরাফাতের সঙ্গে। আরাফাতের মতে, সব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এখনও গ্রেফতার হয়নি। ফলে তারা আতঙ্কে আছেন। 

আতঙ্ক বেশি ঢাকা উদ্যান এলাকায়

গত দুই বছর থেকে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেশি বেড়েছে। তাদের বিভিন্ন চক্রের সদস্যকে র্যাব ও পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু তাদের উৎপাত কমেনি। বরং দিনদিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিগত সরকারের সময়ে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দিনে-দুপুরেও ছিনতাই শুরু করেছে। 

ঢাকা উদ্যানের সম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরে সেভ বিডি'র সভাপতি জাহাঙ্গীর পাভেল বলছিলেন, বুধবার রাতেও বেড়িবাঁধের লাউতলার সামনে এক ষাটোর্ধ ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তার দাবি, এমন কোনো দিন নাই চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে না। 

আরও পড়ুন

রাজু হত্যা মামলায় কিশোর গ্যাং নেতা রাতুলসহ গ্রেফতার ৩

তবে তার তথ্যমতে, ক'দিন আগেও ছিনতাইকারীরা ঢাকা উদ্যান এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে ছিনতাই করতো। কিন্তু সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে তারা স্পট বদল করেছে। তারা এখন বেড়িবাঁধ থেকে বসিলা সড়কে এবং বসিলার মেট্রো হাউজিং এলাকার চল্লিশ ফিট সড়কে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। 

গত কয়েক বছর থেকে এই এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে আসছিলেন তিনি। তার মতে, মোহাম্মদপুর এলাকায় যত ছোট বড় বস্তি রয়েছে প্রত্যেকটিতে থাকা উঠতি যুবকরা এসব অপকর্মে জড়িত। তাদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয়ের তালিকা করতে পারলে অপরাধ কমানো সম্ভব। 

এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি জিয়াউল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা কাজ করছি। প্রতিদিন অভিযান চলছে। তবে আগের মতো এখন আর রাস্তাঘাটে ছিনতাই হচ্ছে না। আমরা প্রতিটি গ্রুপকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে। জেনেভা ক্যাম্পে প্রতিদিন আমরা অভিযান চালাচ্ছি এবং চালাবো। আমরা সব ধরনের অপরাধী গ্রুপকে শূন্যের কোটায় আনতে চাই। 

এমআইকে/এমএইচএম