জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম
অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে গলাকেটে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নারায়ণঞ্জের ভুক্তভোগী এক নারী। এখন তিনি নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ, তাকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা। এর আগে তার স্বামীকেও হত্যা করা হয়। সেই মামলা তুলে নেওয়ার চাপও রয়েছে তার ওপর।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, প্রধান আসামি শ্যামল হাসান রুবেল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সলিমুল্লা সলুর প্রধান সহযোগী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় সুজন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মামলায় সম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন সলু। তবে সলুর আশ্রয়ে রুবেল নানা অপকর্ম করলেও এখনো থেমে নেই তার উৎপাত। এখনো তিনি বেপরোয়া। আর এ কারণেই পলাতক জীবন-যাপন করছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভুক্তভোগী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসে যান। এসময় তার স্বামী মো. রানা হত্যা মামলার আসামি সবুজ, তার সঙ্গে প্রধান অভিযুক্ত শ্যামল হাসান রুবেল, সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পূর্ব পরিচিত পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন আসেন। যাদের সঙ্গে আগে থেকেই স্বামী হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তায় একা পেয়ে কথা আছে বলে ওই নারীর গতিরোধ করে আসামিরা। এক পর্যায় সবুজ ও শাহ আলমদের বিরুদ্ধে করা পিটিশন মামলা তুলে নিতে বলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক সিএনজিতে উঠিয়ে ঝিলমিল প্রজেক্টের ভেতর পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে সবাই মিলে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। শ্যামল হাসান রুবেল তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ওই নারীকে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করেন। গলা টার্গেট করে কোপ দিলে সরে যাওয়ায় তার বাম হাত কেটে যায়। আট থেকে ১০ ইঞ্চির মতো কেটে যায়, ধস্তাধস্তি ও ব্যাপক মারধরের শিকার নারীকে জামা-কাপড় টেনে ছিঁড়ে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়। তবে ভুক্তভোগীর চিৎকারে পথচারী ও স্থানীয়রা এগিয়ে এলে সটকে পড়ে আসামিরা। যাওয়ার সময় বলে যায়- ‘আজকে তুই কোনোমতে বেঁচে গেলি, কিন্তু মামলা তুলে না নিলে পরবর্তীতে লাশ গুম করে ফেলব।’
ওই নারী জানান, পরবর্তী সময়ে স্থানীয় এক নারীর সহযোগিতায় মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী নারী। পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে চার দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন, শ্যামল হাসান রুবেল, মো. সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়া, সবুজ, শাহ আলম।
নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরের ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী ভাঙ্গারির ব্যবসা করতেন। একবার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানা হেফাজতে আমার স্বামীকে নির্যাতন করা হয়। পরে হত্যার শিকার হন। ওই ঘটনায় একটা মামলা করছিলাম। স্বামী হারায়া আমিই হুমকিতে ছিলাম। ওই মামলাটাই তুলে নিতে বারবার চাপ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি বিদেশ যাবার চেষ্টা করতেছিলাম। বাঁচতে তো হবে। সেজন্য গত ৪ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম কেরানীগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসে। সেখান থেকে আমাকে জিম্মি করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেদিন কোনোরকমে জখম নিয়ে বাইচ্চা আসছি।’
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, আজই (রোববার) ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবি পুলিশের হাতে মামলাটির তদন্ত ভার ন্যস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবি ঢাকা জেলা দক্ষিণ ডিবির ইন্সপেক্টর সাইদুল ইসলাম বলেন, মাত্র্র মামলাটি হাতে পেয়েছি। মামলা হলেই তো আর আসামি ধরা যায় না। তদন্ত করার সময় তো দিতে হবে।
এমআইকে/জেবি