রাজধানীর নটরডেম কলেজের স্টাফ চাঞ্চল্যকর লিপিকা গোমেজ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতার দুজন জুয়েল (২১) ও নজরুল (২২) মূলত লিপিকা গোমেজের বাসায় চুরি করতে ঢুকেছিলেন। কিন্ত তিনি দেখে বাধা দেওয়াই তার জন্য কাল হয়। তাকে প্রথমে লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন গ্রেফতার দুজন।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) ইউনিট ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বিজ্ঞাপন
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গ্রেফতার জুয়েল রানা নজরুলদের বাসায় মেসে খেতেন। সেখান থেকেই তাদের পরিচয় এবং ৭-৮ বছরের বন্ধুত্ব। জুয়েল রানা নজরুলকে জানান, তার পাশের বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় একজন মহিলা একা থাকেন। তার কোনো স্বামী ও সন্তান নেই। তার বাসায় চুরি করলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক জুয়েল রানা তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ওই দিন রাত অনুমান ১১টার দিকে নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় আসেন। রাত ১টার দিকে নজরুল ছাদের ওপর দিয়ে এসে রশির সাহায্যে ঝুলে নিহতের বাসার পেছনের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। নজরুল বাসার মেইন দরজা খুলে ছাদে গিয়ে জুয়েল রানাকে ডেকে আনেন। তারা একত্রে বাসায় চুরি করার সময় ভিকটিম শব্দ করলে নজরুল একটি লোহার পাইপ দিয়ে লিপিকার মাথায় সজোরে আঘাত করেন। পরে জুয়েল রানা বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরলে লিপিকা তাৎক্ষণিক মারা যান।
পিবিআই জানায়, তারা উভয়ই নিহতের দুটি মোবাইল, হাতব্যাগ নিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে জুয়েল রানার বাসায় চলে যান। সেখানে দুজনে হাতব্যাগে থাকা ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা ভাগ করে নেন। ভোরে নজরুল বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় চলে যান। এরপর মোবাইল ফোন দুটি সাড়ে তিন হাজার টাকায় শিবলু হোসেন জয় নামে একজনের কাছে বিক্রি করে টাকা ভাগ করে নেন তারা।
পিবিআই আরও জানায়, লিপিকা গোমেজ (৪০) সূত্রাপুরের ৭৫নং ঋষিকেশ দাস রোডের চতুর্থ তলার ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি ঢাকা নটরডেম কলেজে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি সেই বাসায় একা থাকতেন। প্রায় ১৮ বছর আগে তার স্বামী মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে যায়। তার কোনো সন্তানাদি নেই। গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের মতো লিপিকা গোমেজ তার অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিন কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও তার খবর সংগ্রহের জন্য স্টাফ জনি ও জয়দেবকে লিপিকা গোমেজের বাসায় পাঠান। জনি ও জয়দেব ওই বাসায় এলে কেয়ারটেকার মিতু তাদের নিয়ে দুপুরে লিপিকা গোমেজের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে তার শয়নকক্ষের খাটের উপরে তার মৃতদেহ দেখতে পান।
সংবাদ পাওয়ার পর তার মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ দ্রুত লিপিকা গোমেজের বাসায় আসেন। কিন্তু তিনি তার বাসার গেট তালাবদ্ধ পান। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে গেট ভেঙে লিপিকার মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় লিপিকার মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় রোববার অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারেরর সময় তাদের কাছ থেকে একটি নোজ প্লাস, দুটি স্ক্রু ড্রাইভার এবং নিহতের চুরি যাওয়া বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
এমআইকে/জেবি

