জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
রাত তখন সোয়া ১১টা। প্রধান সড়কের কাটা অংশ দিয়ে একটি রিকশা ঘোরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাতে ছিল এক দম্পতি। কেবলই তাদের রিকশাটি বাঁক নিয়েছে। ঘুরবে কাটার অংশটি। সেই সময় দ্রুত গতিতে আসে একটি মোটরসাইকেল। তাতে থাকা দুই যুবকের একজন রিকশায় থাকা নারীর হাতে থাকা মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে মোটরসাইকেলটি দ্রুত চালিয়ে চলে যায় তারা। এসময় ওই নারী চিৎকার শুরু করলে সেই শব্দ শুনে সড়কে থাকা দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাগাল পাওয়া সম্ভব হয়নি ছিনতাইকারীদের।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে ধানমন্ডি-২৭ এলাকার ১৬ নম্বর সড়কে এভাবেই চলন্ত মোটরসাইকেলে উড়ন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মুহুর্তেই নারীর হাতে থাকা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
ঘটনাটি যখন ঘটে তখন সড়কে তেমন লোকজনও ছিল না। দুই একটি বাহন আসছিল-যাচ্ছিল। সেই ফাঁকেই ঘটে যায় এ ঘটনা। এছাড়াও সড়কের দুই পাশের দোকানপাট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ছিল।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সেই ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করা দুই ব্যক্তির একজন ছিলেন মহিবুল নামের মোটরসাইকেল আরোহী।
মহিবুল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি মিরপুর রোড হয়ে ১৬ নম্বর সড়ক দিয়ে মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য আসছিলাম। পথে ইউসিবি ব্যাংকের শাখা থেকে খানিকটা কাছে আসলে সড়কের মাঝে একটা অংশ পড়ে। সাধারণত সেই অংশ দিয়ে লালমাটিয়া এলাকা ছাড়াও যারা ইউটার্ন নিতে চায় তারা যানবাহন ঘুরিয়ে থাকেন। সেই জায়গায় আসতেই চোখে পড়ল একটি নারী ও পুরুষ যাচ্ছিলেন। তাদের রিকশাটি তখন ইউটার্ন নেবে। আমি তাদের পেছনে ফেলে কিছুদূর এগিয়ে এসেছি। সেই মুহুর্তে পেছনে এক নারীর চিৎকারের শব্দ। বুঝতে আর বাকী রইলো না তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখি আমার পেছনে একটি মোটরসাইকেল আসছে। তাতে দুজন। ধরে নিলাম তারাই ছিনতাইকারী। এরপর তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশ আই হাসপাতালের মোড় হয়ে ইবনে সিনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আমার পেছনে থাকা আরেক যুবক মোটরসাইকেলে তাদের ধাওয়া দিতে লাগলো। আমিও পিছু নিলাম। এরপর তিনজন ছুটছি। সবার সামনে থাকা প্রথম মোটরসাইকেলটি ইবনে সিনার সামনে হয়ে পূর্ব দিকের রাস্তায় ঢুকে গেল। এরপর আমরাও তাদের পিছু নিতে লাগলাম। এক সময় ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলটি আবাহনী মাঠের সামনে হয়ে ধানমন্ডি-৩২ এর লেকের দিকে চলে গেল। তাদের দুই মোটরসাইকেলকে ফলো করতে করতে তারা এক সময় ৩২ এর লেক ব্রিজ পার হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসার দিকে রাস্তায় ঢুকে পড়ে হারিয়ে গেল।
তিনি বলছিলেন, আমিও সেখানে গেলাম কিন্তু অন্য যানবাহনের ভিড়ে হারিয়ে গেল তারা। এরপর সেখান থেকে ফিরে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালাম। বিষয়টি ধানমন্ডি পুলিশকে জানানো হলে তারা নোট নিল, জায়গার নাম জেনে নিল এবং কোন দিক থেকে কোন দিকে তারা গেছে সব জেনে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে এবং টহল টিম পাঠাবে বলে জানালো পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, বিষয়টি আমার টহল টিমকে বলেছিলাম। পরে তারা সেই জায়গায় গিয়ে ভিকটিমকে পেয়েছিল। ওই নারীর মোবাইল নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। তবে এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সিসি ফুটেজ ধরে ছিনতাইকারীদের শনাক্তে কাজ করা হচ্ছে।
ওই রাতে টহল টিমের দায়িত্বে থাকা ধানমন্ডি থানার এসআই মারুফ বলেন, ওই নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি দেখছি।
রাজধানীতে ঈদ পরবর্তীতে ধানমণ্ডির মতো এলাকায় ছিনতাইয়ের এমন ঘটনা অনেককে বিস্মিত করেছে। তবে ওই নারীকে পুলিশ খুঁজে পেলেও তার নাম ঠিকানা জানাতে পারেনি।
এমআইকে/এমএইচএম