জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৩ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
গভীর রাত। তখনো মাইকে ডাক আসেনি সেহরি খাওয়ার। ঘুমিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। ভবনের দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখেন পথচারীরা। এসময় তাদের কেউ একজন দারোয়ানকে দরজায় নক করে ডেকে তোলেন। এরপর তারা ভবনের তৃতীয় তলায় ঘুমিয়ে থাকা কয়েকজন শ্রমিককে ডেকে তুলে নামিয়ে নিয়ে আসেন। শেষে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে কল দিলে তারা ছুটে গিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা। এভাবে আগুন লাগার সময় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান পুরান ঢাকার চকবাজারে লৌহজং রাবার অ্যান্ড এশিয়ান প্লাস্টিক লি. নামের একটি জুতার সোল তৈরির কারখানার ঘুমিয়ে থাকা শ্রমিকরা।
শনিবার (২৩ মার্চ) ভোর রাত তিনটার দিকে কারখানাটিতে আগুন লাগে। সময় মতো ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ছুটে যাওয়ায় রক্ষা পান ঘুমিয়ে থাকা শ্রমিকরা। এছাড়াও ইউনিট বেশি কাজ করায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
কারখানাটিতে জুতার সোল তৈরি হতো। চার তলা ভবনের নিচতলায় তৈরি মালামাল রাখা হতো। এখানেই জুতা তৈরির পর মেশিনে কাটিং করা হতো। দ্বিতীয় তলায় ছিল জুতার সোল তৈরির কাঁচামাল পুরনো জুতার কাটা টুকরো টুকরো অংশ, যা বস্তায় এবং ধানের মতো করে ঢিপ করে রাখা ছিল। আর তৃতীয় তলায় থাকতেন শ্রমিকরা। চতুর্থ তলায় নষ্ট মালামাল রাখা হতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভবনটির মালিক সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বাবুল। প্রায় ২০ বছর থেকে ভবনটিতে এ কাজ চলছিল বলে দাবি অনেকের।
দুপুরে পুড়ে যাওয়া কারখানাটির নিচে কথা হচ্ছিল শ্রমিক নজরুলের সাথে। তিনি বলছিলেন, কারখানা চারদিন খোলা থাকে তিন দিন বন্ধ। শনিবার থেকে মঙ্গলবার চলে এ কারখানা। বাকী দিনগুলো বন্ধ থাকে। আজ শনিবার সকাল থেকে চালু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই সেটির দ্বিতীয় তলায় হঠাৎ করে আগুন লাগে। তবে কি থেকে আগুনের সূত্রপাত তা তিনি বলতে পারেননি। শর্ট সার্কিট থেকে এমন দুর্ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানালেন, ওই সময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক কারখানাটির তৃতীয় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। এলাকার লোকজন না ডেকে তুললে তারা পুড়ে মরতো। তবে সময়মতো তাদের ডেকে তোলায় রক্ষা পেয়েছেন বলে মনে করছেন তারা।

ভবনটি সরেজমিন তৃতীয় তলায় ওঠে দেখা গেল, তৃতীয় তলার সিঁড়ি বেয়ে ওঠতে বামে থাকা বড় একটি রুমে রাখা হয়েছে তৈরি জুতার শতশত সোল আর বিপরীত পাশে ডানের এক কোনায় একটি রুমে কিছু কাঁথা বালিশ, কাপড় আর দুটি খাবারের টিফিনকারী আস্ত পড়ে আছে।
কারখানাটির কর্মী শুভ বলছিলেন, আমি বাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত তিনটার দিকে খবর পেলাম আগুন লাগছে। ছুটে আসলাম কিন্তু ঢুকতে পারিনি।
তবে কারখানাটির শ্রমিকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের তেমন কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ওই সময় বেশ কিছু নারী ও পুরুষ শ্রমিক দ্বিতীয় তলায় থাকা জুতার সোল তৈরির কাঁচামালগুলো কোদালে কেটে কেটে বস্তায় ভরছিল আর সেগুলো নিচে নামাচ্ছিল। তবে তারা কোনো কথা বলতে চাননি।
কারখানাটি থেকে নেমে নিচে থাকা রাস্তায় কথা হচ্ছিল ফারুক নামে এক যুবকের সাথে। তিনি বলছিলেন, ফায়ারম্যানরা সময় মতো না আসলে বড় কিছু ঘটে যেতো। কারণ এলাকাটি আবাসিক। তার মাঝে চলছিল কারখানাটি।
ঘটনাস্থলে পাওয়া গেল মালিকের চাচাতো ভাই শরীফকে। তিনি ঢাকা মেইলের কাছে দাবি করেন, ওই সময় কারখানাটির ভেতরে কোনো শ্রমিক ছিল না। একজন ফোরম্যান ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রথমে এলাকার লোকজন আগুন দেখে দারোয়ানকে ডেকে তোলেন। এরপর তারাই তৃতীয় তলায় ঘুমিয়ে থাকা ফোরম্যান মন্টুকে ডেকে তোলে। এরপর ফায়ারের লোকজন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
আগুন লাগা ভবনের মালিকের ভাই আব্দুল কুদ্দুস রানার দাবি, সেখানে অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি কারখানা তারা নাকি বৈধভাবে চালাচ্ছেন। বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইনও তারা বৈধভাবে নিয়ে এসব ব্যবসা চালাচ্ছেন।
এমআইকে/এমএইচটি