images

জাতীয়

কনকনে শীতে খোলা আকাশের নিচে মোল্লাবাড়ি বস্তির বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম

images

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মোল্লাবাড়ি বস্তির বাসিন্দারা। পেশায় মাছ কাটা ও মাছের আড়তে কাজ করা বস্তির ৩০০ ঘরের বাসিন্দার দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। কনকনে শীতে পলিথিনের ছাউনি বা খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে রাত কাটাচ্ছেন অসহায় বস্তিবাসী।

ঘটনার তিন দিন পার হলেও এখনো সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিকল্প আবাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টো পুলিশ দিয়ে জায়গা খালি করতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বস্তিবাসীর।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) আগুনে পুড়ে যাওয়া মোল্লাবাড়ি বস্তিতে সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

আরও পড়ুন

ঢিল ছুড়ে বস্তিবাসীকে না জাগালে ঘটত বড় ট্রাজেডি! 

এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে নিঃস্ব মানুষেরা বস্তির সামনের রেললাইনের দুই পাশে খোলা স্থানে অস্থায়ী ছাউনি ও চৌকি ফেলে অবস্থান করছেন। পুরুষেরা কাজে চলে গেলেও বস্তির নারী, শিশু ও বয়স্করা এসব স্থানে বসে আছেন। তাদের চোখে-মুখে হতাশা ও অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে পোড়া বস্তি এলাকায় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয়দের মাঝে যারা পোড়া ঘরের স্থানে চৌকি পেতে অবস্থান করছেন তাদের স্থানটি ছেড়ে চলে যেতে বলছে পুলিশ।

Winter2

স্থানীয়রা বলছে, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যেন পোড়া বস্তির জায়গা ছেড়ে দেন। এখানে প্রশাসন মাটি ভরাট করবে। তবে অস্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা না করে বস্তি ছাড়তে নারাজ এখানকার বাসিন্দারা। আগে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি তাদের।

সত্তরোর্ধ্ব রেহানা বেগম। ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই একটি চৌকি পেতে এক বছর বয়সী নাতনিকে নিয়ে বসে আছেন। পাশে একটি কম্বল ছাড়া চৌকিতে কোনো তোষক বা বালিশ নেই। তীব্র ঠান্ডায় নাতনিকে নিয়ে কী করে থাকছেন জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ‘বহু বছর যাবত এখানে থাকছি। আমাদের ঘরটা উত্তর পাশে ছিল। আমি এখানে আমার মেয়ের জামাই, নাতি-নাতনিসহ সাতজন থাকতাম। সব পুড়ে গেছে, কিছুই নাই। এখন চৌকি ফেলে এখানে থাকছি। তাও পুলিশ আইসা সইরা যেতে বলছে। এখন পর্যন্ত একটা কম্বল ছাড়া কিছুই পাইনি।’

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আল আমিন নামে অপর ব্যক্তি বলেন, ‘ঘরে টিভি-ফ্রিজ সবই ছিল। কিছুই নিয়ে বের হতে পারিনি। দুইটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ছিল। ওইগুলোও বের করতে পারিনি। আগুন লাগছে দেখে কোনো রকম জীবনটা নিয়ে বের হইছি। পোলাপানের কাপড়টা পর্যন্ত নিয়ে বের হতে পারিনি।’

আরও পড়ুন

ছেলেকে বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দেন শারমিন 

কোনো ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েকজন এসে কয়েকটা হাড়িপাতিল দিয়ে গেছে। একটা কম্বল পাইছি। এখানে অনেক লোকজন ছিল, সবাই এখন রাস্তায় আছে। রেললাইনের দুই পাশে সবাই থাকছে। কিন্তু এখানেও থাকতে দিচ্ছে না, দেখেন পুলিশ আইছে। আমাদের চৌকি সরিয়ে নিতে বলছে। তারা বলছে, এখানে মাটি ভরে বিল্ডিং করে দেবে। আমরা এখন কোথায় থাকবো এই বিষয়ে কিছুই বলছে না, উল্টো আমাদের এই জায়গা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।’

স্থানীয় প্রশাসন ও নেতাদের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থাকার জায়গার বিষয়ে স্থানীয় নেতারাও কেউ কিছু বলছেন না। এর মাঝে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল সাহেব এসেছিলেন। আমাদের দেখে গেছেন।’

Winter3

রেললাইনের পাশে ছাউনি দিয়ে অবস্থান করা গোলাম হোসেন বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই এখানে থাকছি। পুরো বস্তির সব মানুষই এভাবে থাকছে, কেউ বস্তির সামনে আবার কেউ রেললাইনের ওপর পাশে। ৩০০ ঘরে হাজার দেড় হাজার মানুষ ছিল। আমাদের তো অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গাও নাই।’

বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘর থেকে কিছুই নিয়ে বের হতে পারি নাই। গায়ে দেওয়া এই গেঞ্জি আর লুঙ্গিটা পরে বের হয়েছি। পরে ভাই এসে শীতের এই জামাটা দিয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন

মোল্লাবাড়ি বস্তিতে আগুনের ঘটনায় মামলা 

থাকার ব্যবস্থার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে মাছের আড়তে কাজ করা এই ব্যক্তি বলেন, ‘না, আমাদের কিছুই বলেনি। তাই এখানেই থাকছি। সরকার থেকে কম্বল ও শুকনা খাবার দিছে৷ গতকাল রাতে খিচুড়িও দিয়েছিল।’

এর আগে গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বস্তিটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত ও কয়েকজন দগ্ধ হয়েছেন।

এমএইচ/জেবি