images

জাতীয়

রাত পোহালেই টানেল যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি এবং টানেল পার হয়ে বেলা ১১টায় আনোয়ারায় নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত। টানেলটি সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফলে বড় বাধা অপ্রশস্ত মহাসড়ক

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং প্রথম পানির নিচের সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহরও প্রকাশ করবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীকাল আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে জেলাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করায় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বহু প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের জন্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারাদেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

022

মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মঞ্চে থাকবেন। অনুষ্ঠানস্থলে নৌকার আদলে একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

চৌধুরী বলেন, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ অনুষ্ঠানস্থলে স্যানিটেশন ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং নারীদের নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন: জলোচ্ছ্বাস থেকে ‘অনিরাপদ’ বঙ্গবন্ধু টানেল

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দশ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের জনসভা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য গর্বের বিষয়। লাখ লাখ মানুষের জন্য বিশেষ করে বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের একটি ‘স্বপ্ন সত্যে পরিণত’ হলো। বহুল প্রত্যাশিত মাল্টিলেন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্রেসওয়ে টানেলটি দক্ষিণ এশিয়ার এ ধরনের প্রথম টানেল এবং এই অঞ্চলের একটি প্রধান নদী কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন টানেলটি ব্যবহার করতে পারবে, যা বছরে প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন যানবাহনের সমান।

তিনি বলেন, টানেলটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১৬৬ শতাংশ বাড়াতে সাহায্য করবে। কাদের বলেন, ‘টানেলটি চট্টগ্রাম শহর, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরের দূরত্বও কমিয়ে দেবে। কারণ এটি অর্থনীতিকে আরও প্রাণবন্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

মেগা প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ এটি এই অঞ্চলে নদীর তলদেশে প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গ।

এটি চট্টগ্রাামকে চীনের সাংহাই শহরের মতো ‘দুটি শহরকে একটি শহরে’ পরিণত করবে। কারণ এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে এবং শিল্পায়ন, পর্যটন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও সড়ক যোগাযোগ বিকাশে অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে শহরের পরিধিকে সমগ্র অঞ্চলে প্রসারিত করবে।

আরও পড়ুন: কর্ণফুলী টানেলে বাইকসহ চলবে না যেসব যান

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ পানির নিচের সড়ক সুড়ঙ্গের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যা অবশ্যই সমগ্র জাতির জন্য গর্বের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ব্যাপক সুবিধা দেবে।

টানেলটি এই অঞ্চলে শিল্পায়নকে বাড়িয়ে তুলবে। কারণ চট্টগ্রাম-কেইপিজেড-এর আনোয়ারায় দুটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং হালিশহরে চট্টগ্রাম ইপিজেড- এবং আনোয়ারাতে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) এই টানেলের জন্য অত্যন্ত সুবিধাপ্রাপ্ত হবে।

আলম বলেন, এটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে সংযুক্ত করবে। কক্সবাজারে চলমান এবং পরিকল্পিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাবকেও সুবিধা দেবে, যা ইতিমধ্যেই দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র।

Tanel2

এভাবে পদ্মা সেতুর মতো এই টানেল দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, টানেল ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং কর্ণফুলী নদীর তীরে পরিকল্পিত শিল্পায়নকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। পাশাপাশি এটি মিজোরাম ও মণিপুরসহ ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’-এর সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়াতে এবং এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসার ঘটাতে পারে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, পুরো রুটের দৈর্ঘ্য হল ৯.৩৯ কিলোমিটার (৫.৮৩ মাইল), টানেলটি ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল) দৈর্ঘ্য তৈরি করে এবং এর ব্যাস ১০.৮০ মিটার (৩৫.৪ ফুট)। এটি ১০,৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এর প্রায় অর্ধেক চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করেছে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু টানেলে যে হারে দিতে হবে টোল

এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নত হবে। চীনের একটি কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেল বোরিং ফেজও উদ্বোধন করেন।

মাল্টিলেন টানেল রুটটি একদিকে নেভি কলেজ এবং অন্যদিকে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এর কাছাকাছি নদীর মধ্য দিয়ে গেছে। এতে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতুর যানজটও কমবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান বলেন, টানেলটি চট্টগ্রামকে দুটি শহর থেকে একটি শহরে পরিণত করে অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করবে। টানেল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি। -বাসস

জেবি