শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

জলোচ্ছ্বাস থেকে ‘অনিরাপদ’ বঙ্গবন্ধু টানেল

ব্যুরো প্রধান
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২২, ১২:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

জলোচ্ছ্বাস থেকে ‘অনিরাপদ’ বঙ্গবন্ধু টানেল
ছবি : ঢাকা মেইল

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের এই টানেল। এসময়ই নতুন এক বিপদ নজরে পড়ে বিশেষজ্ঞদের। তা হলো সাগরের জলোচ্ছ্বাস। 

যা চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থেকে নেভাল একাডেমির রেডকিন চত্বর পর্যন্ত প্রায় ১১০০ মিটার উন্মুক্ত উপকূল দিয়ে আঘাত হানতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) প্রকৌশলীরা। 


বিজ্ঞাপন


তবে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে টানেলের গোড়ায় রাবার ড্রাম বসানোর কথা জানিয়েছেন বাপাউবোর চট্টগ্রাম পওর-১ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গায় টানেল সুরক্ষায় রাবার ড্রামের মতো বাঁধ স্থাপন করা হয়েছে। এতে মাঝারি ধরণের জলোচ্ছ্বাস থেকেও রক্ষা পাবে টানেলটি।  

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পতেঙ্গা থেকে নেভাল একাডেমির রেডকিন চত্বর পর্যন্ত পশ্চিম প্রান্তের উন্মুক্ত স্থানটি টানেলের জন্য বড় হুমকি বলে মনে হচ্ছে। পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ ঘিরে আমরা আউটার রিং রোডের ইন্টারসেকশন নিয়ে কাজ করছি। তাই এই স্থানটিকেও বাঁধের ভেতরে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সেজন্য আমরা নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে আউটার রিং রোডের বিদ্যমান প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। রিভাইজড প্ল্যান দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ইতোপূর্বে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ মিটার পর্যন্ত বেশি জলোচ্ছ্বাসের রেকর্ড রয়েছে। যা মাথায় রেখে আউটার রিং রোড তৈরি করা হয়েছে। এই রিং রোড সাগরের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ মিটার বেশি জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে পারবে। কিন্তু পতেঙ্গার আউটার রিং রোডের স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে নেভাল একাডেমির পশ্চিম কর্ণারের রেডকিন চত্বর পর্যন্ত কোনো বাঁধ নেই। পুরো এলাকাটি উন্মুক্ত। 

বিশেষজ্ঞদের ধারণা— বড় কোনো জলোচ্ছ্বাস হলে মোহনার এই অংশ দিয়ে পানি ঢুকে টানেল প্লাবিত করবে। এতে যে বিপর্যয় দেখা দেবে তা সামলানো অসম্ভব। পশ্চিম প্রান্তসহ উন্মুক্ত স্থানটিকে টানেলের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Tunnel

গত ৩ মার্চ পতেঙ্গা এলাকার গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কের ইন্টারসেকশন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করার সময় সমন্বয় কমিটির সভায় টানেলের জন্য নতুন এই হুমকির বিষয়টি উঠে আসে। এতে বলা হয়— পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণকালে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে। এতে সাগরের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাবে নগরী। এই বাঁধ নির্মাণকালে বিগত এক শ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। 

এই অবস্থায় টানেল নিরাপদ করতে আউটার রিং রোডের সুউচ্চ বাঁধকে রেডকিন চত্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিদ্যমান পাড়ের মতো করে বাঁধটি না করে পতেঙ্গা থেকে কোণাকুনি রেডকিন চত্বর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করার চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। এর ফলে পশ্চিম প্রান্তের এলাকাটি বাঁধের ভেতরে চলে আসার পাশাপাশি সাগর থেকে বিপুল পরিমাণ ভূমিও রিক্লেইম হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার উঁচু করে বাঁধ নির্মিত হলে উন্মুক্ত স্থানটি সুরক্ষিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ঝড় জলোচ্ছ্বাসে টানেল প্লাবিত হওয়ার কোনো শঙ্কা থাকবে না। টানেলের স্বার্থেই জরুরিভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, জলোচ্ছ্বাসের বিষয়টি মাথায় রেখে টানেল প্রকল্পের দুই প্রান্তে গেইট বসানো হয়েছে। ফলে জলোচ্ছ্বাস হলেও টানেলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে জাপানের মতো বড় ধরণের কোনো জলোচ্ছ্বাস বা সুনামি হলে টানেলে আঘাত আসতে পারে। সেটা তো সৃষ্টিকর্তার ওপর নির্ভর। 

প্রকল্পের তথ্যমতে, যানজট নিরসন ও শিল্পের সম্প্রসারণে চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এটা প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম। প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে উপমহাদেশের প্রথম এই টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। 

প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে ঋণ হিসাবে চীনের এক্সিম ব্যাংক দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থের যোগান হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। নগরীর পতেঙ্গা থেকে শুরু হওয়া প্রথম সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় গত বছর ৬ অক্টোবর। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। 

এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু। প্রকল্প ঘিরে ইতোমধ্যে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা এলাকায় বিশেষ অর্থনীতি অঞ্চলসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। 

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর