দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
২০ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫৮ এএম
ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে দুই বছরে দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরই অংশ হিসেবে সড়ক বিভাজক থেকে শুরু করে ফুটপাতেও গাছ লাগাচ্ছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার গাছ রোপণ করা হলেও পরিচর্চা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণে দায়সারা ভাব দেখা গেছে। অযত্ন-অবহেলায় মরতে বসেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে গাছের চারা রোপণ করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে সিটি করপোরেশন!
গত ২ মে ঢাকা উত্তরে দুই লাখ গাছ রোপণের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তার ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার গাছ রোপণ করা হয়। মিরপুর সড়ক, মহাখালী, বনানী, গুলশানসহ উত্তরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এসব গাছ লাগানো হয়। কিন্তু যথাযথ পরিচর্চার অভাবে অনেক গাছ মরে গেছে। আবার অনেকগুলো গাছ মরার উপক্রম হয়েছে।
সিটি করপোরেশন বলছে- এসব গাছ দেখাশোনায় আলাদা কোনো মালি কিংবা কর্মী নেই। যে ওয়ার্ডের অধীনে গাছ লাগানো হয়েছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের দেখভাল করার কথা। তবে এক শ জন মালি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, তখন হয়তো এই সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে।
সিটি করপোরেশন বলছে- গাছ যে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে হবে। একে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে পারলেই গাছ নষ্ট করার মানসিকতা অনেকাংশেই কেটে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক বিভাজকের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এর আগে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নযজ্ঞে শতাধিক বড় আকৃতির গাছ কাটা হয়। সম্প্রতি সেখানে রোপণ করা হয়েছে গাছের চারা। এছাড়াও দুই পাশের ফুটপাতেও অল্প দূরত্বে লাগানো হয়েছে গাছ। উন্নয়ন কাজে কাটা পড়া মিরপুর সড়কের দারুসালাম এলাকাতেও গাছ লাগিয়েছে সংস্থাটি।
মহাখালী এলাকায় দেখা যায়- অনেক গাছ মরে গেছে। বৃষ্টির পর নতুন পাতা গজানো কিছু গাছ মরে গেছে। কোথাও আবার গাছ থাকলেও বাঁশের খাঁচা নেই। কোথাও কোথাও খাঁচা থাকলেও গাছ নেই। কোনো কোনো গাছ ভরে গেছে আগাছায়।
আরও পড়ুন
ফুটপাতে লাগানো গাছগুলোর যত্ন নিয়ে উদাসীন ভাব দেখা গেছে পথচারী, দোকানিদের মধ্যেও। অনেকেই দেখা যায়- ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং করছেন। গাছের খাঁচার সঙ্গে তালা দিয়ে রাখছেন সাইকেল। অন্যদিকে ফুটপাতসহ দোকানের সামনের অংশে ঝাঁড়ু দিয়ে ময়লা রাখা হচ্ছে গাছের গোড়ায়। ফুটপাত ঘিরে অবৈধ দোকানিরাও ময়লা গাছের গোড়ায় ফেলছেন।
গুলশান এলাকায় দেখা যায়- বেশ কিছু গাছের গোড়ার মাটি দেবে গেছে। মরে আছে গাছ। খাঁচার ওপর ভবঘুরেদের জামাকাপড় শুকাতে দিয়েছে। গাছগুলোতে ভর করেছে আগাছা। পানির অভাবে মরছে কোনোটি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্তমানে কোন গাছ মরে গেলে তৎক্ষণাৎ আরেকটি গাছ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিরা খোঁজখবর রাখছেন। একইস্থানে নতুন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে দেখা যায়- আগে লাগানো গাছগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। গাছগুলোর যত্ন করতে সিটি করপোরেশনে একশ জন মালি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আছে। তাদের নিয়োগ হয়ে গেলে গাছের নিয়মিত যত্ন নেওয়া আরও সহজ হবে।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসি এলাকায় (বস্তি) পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করতে তিনটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর সই হয়। সংস্থা তিনটি হলো লংকাবাংলা, গ্রিন সেভারস ও কমিউনিটি টাউন ফেডারেশন। শেভরন বাংলাদেশের অর্থায়নে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৫টি বস্তিতে দেশীয় প্রজাতির প্রায় ৩৫ রকম ফল, ফুল, কাঠ ও ঔষধি গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বস্তি এলাকায় ইতোমধ্যে তিন হাজারের মতো গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। মেয়র কন্যা ও ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজটি চলমান রয়েছে।
লংকাবাংলার থেকে প্রাপ্ত গাছগুলো রোপণে সহযোগিতা করছে গ্রিন সেভারস। বৃক্ষরোপণে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে শেভরন বাংলাদেশ। রোপিত গাছগুলোর পরিচর্যা ও তদারকির দায়িত্বে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে গঠিত ঢাকা উত্তর কমিউনিটি টাউন ফেডারেশন।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান- বিগত সময়গুলোতে আমরা নিজেদের প্রয়োজনে কেবল বনভূমি ধ্বংস করেছি। শুধু নিজের লাভের চিন্তা করেছি। কিন্তু একবারও ভাবিনি পরবর্তী প্রজন্ম কিসের মধ্যে বড় হবে। আজকে তাই সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। গাছপালা উজাড় করে যেভাবে ভবন বানানো হয়েছে, আমরা যদি এখন পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগাতে না পারি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর জন্য আমাদের দায়ী করবে।
ডিএইচডি/এমআর