images

জাতীয়

কারা খুন করল সদরুলকে, ১০ দিনেও জানতে পারেনি পুলিশ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম

ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের আরশিনগর এলাকায় গত ১৩ আগস্ট সদরুল আলম (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। চারতলা ভবনের চতুর্থ তলায় সদরুল একাই ভাড়া থাকতেন। খুনীরা চারতলায় উঠে হত্যা করে সদরুলকে। হত্যাকাণ্ডের পর ১০ দিন পার হয়েছে। কিন্তু কারা খুন করল সদরুলকে তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।

এ ঘটনায় ভবনটির সামনের ও পেছনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও খুনী শনাক্ত করার মতো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তবে হত্যাকাণ্ডটি চুরিকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, খুনীরা আগে থেকেই সেই বাসায় ঢুকে ছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাড়িটির মালিক ইউনুস মিয়া সবগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অন্যত্র থাকেন। ঘটনার আগের রাতে ইউনুস মিয়ার সাথে সদরুলের কথা হয়েছিল। পরে সদরুল বাসায় ঘুমাতে যান। পরদিন সকাল ১০টার দিকে বাড়ির মালিক ইউনুস মিয়া ছাদে যান। এসময় তিনি একটি মানিব্যাগ দেখতে পান। তা হাতে নিয়ে তাতে সদরুলের ছবি দেখতে পান। পরে বাড়ির অন্য লোকজনকে নিয়ে সদরুলের ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ দেখে তা খুলতে ধাক্কাধাক্কি করেন। এক পর্যায় শাবল দিয়ে দরজা ভাঙলে প্রথমে সদরুলের রক্তমাখা মাথা বেরিয়ে আসে। এ দৃশ্য দেখে বাড়ির মালিক অজ্ঞান হয়ে যান। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে চারদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।

>>আরও পড়ুন: ‘বিপদ গরিবের ওপর দিয়া যায়’

এদিকে বাড়ির লোকেরা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে সদরুলের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় সদরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে।

সদরুল ঢাকার বাংলামোটরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘তাইসি করপোরেশনে’ সেলস অ্যান্স সার্ভিস ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। আরশিনগরের সেই ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন তিনি। তার স্ত্রী দুই কন্যা সন্তান নিয়ে রংপুরের গ্রামের বাড়িতে থাকতেন।

স্থানীয়রা বলছেন, চুরির ঘটনা জেনে ফেলায় হয়তো সদরুলকে হত্যা করা হয়েছে। চোর চক্রের সদস্যরা রাতে ফ্ল্যাটের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে তাকে হত্যা করতে পারে বলে তাদের ধারণা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটির এক পাশে এএস টাওয়ার, অন্য পাশে আরেকটি ভবন। ভবনগুলো মাঝে ফাঁকা জায়গা দেড় থেকে দুই ফুটের মতো ফাঁকা জায়গা, যা দিয়ে সহজে যে কেউ ভবনটিতে উঠতে পারে।

ভবনটির মালিক ইউনুস মিয়া ঢাকা মেইলকে জানান, মৃতদেহ দেখেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক দাবি করেন তিনি।

এলাকার কয়েকজন যুবক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে এলাকার নেশাখোর যুবকরাই জড়িত। তারা রাতের বেলা চুরি করে এবং দিনের বেলায় নেশা করে। এদের ওই এলাকার সবাই কমবেশি চেনে। তারা ভয়ঙ্কর। তাই ভয়ে লোকজন হয়তো কিছু বলছে না।

>>আরও পড়ুন: ‘২ লাখ টাকার লাইগা কলিজাডা কাইরা নিল এসআই জহিররা’

তাদের দাবি, এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবনকারী, চোর ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত হত্যাকারীদের পরিচয় বেরিয়ে আসবে। এলাকার লোকজন ছাড়া এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত নয়।

এদিকে সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খুনীরা সদরুলকে ছুরি দিয়ে বুকে (ফুসফুস বরাবর) আঘাত করেছে। বুকের যে জায়গায় আঘাত করা হয়েছে তাতে কম লোকই প্রাণে বাঁচে। তার মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন ছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সদরুলকে বুকে আঘাতের পর খুনীদের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায় তিনি দরজার কাছে পড়ে গেলে মাথায় আঘাত লাগে। এরপর খুনীরা তার দুটো মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগে থাকা টাকা নিয়ে ভেন্টিলেটর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পুলিশ বাসাটির ভেন্টিলেটরে কোনো জাল বা প্রটেকশন পাননি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, পুলিশ এ ঘটনায় ওই বাসায় থাকা তিনটি এবং বাড়ির মালিকের ভাইয়ের বাসার একটি সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। তবে বাড়ির মালিকের বাসার পেছনের অংশের ফুটেজ মেলেনি, কারণ সিসি ক্যামেরা নষ্ট। বাসাটির পেছনের ফুটেজ না পাওয়া গেলেও কিছু আলামত মিলেছে যার সূত্র ধরে এখন তদন্ত করছেন তারা। যেকোনো ব্যক্তি ভবনটির পেছনের দেয়াল বেয়ে সহজে ছাদে উঠে যেতে পারত, কারণ ছাদে কোনো প্রটেকশন ছিল না। এছাড়া ওই পার্শ্ববর্তী রাস্তার আরো কিছু সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেগুলো যাচাই চলছে।

পাশাপাশি সদরুলের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেও কাজ করছেন তারা। কিন্তু মোবাইল দুটির নেটওয়ার্ক একটি এলাকায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। এখনো মোবাইল দুটি চালু করা হয়নি।

সূত্র জানায়, খুনীরা ভেবেছিল সদরুল বাসায় নেই। ফলে তারা ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরে ঢুকেছিল। কিন্তু সেদিন সদরুল গভীর রাতে বাসায় যান। সদরুলের বাসায় ঢোকার আগে খুনীরা সেই বাসা রেকি করেছিল। তারপর বাসা বন্ধ দেখে ঢুকে পড়েছিল। সদরুলকে রাতে আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

>>আরও পড়ুন: রমনায় গুলি করে হত্যাচেষ্টা: নেপথ্যে টাকার ভাগবাটোয়ারা?

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ সার্কেলের এএসপি সাহাব উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ ঘটনার পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। তবে রাতের বেলায় হওয়ায় আলো কম ছিল। এ কারণে সেভাবে দেখাও যাচ্ছে না। তারপরও আমাদের টিম কাজ করছে। এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি।

তিনি বলেন, সদরুল খুন হওয়ার আগে থেকে তার পরিবারের সাথে খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছিল। ফলে তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পুলিশ হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কেরানীগঞ্জ থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, এ ঘটনায় আসামি তো অজ্ঞাত। কারণ ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এখনো এ ঘটনায় আসলে কারা জড়িত তা শনাক্ত করতে পারিনি। ওই এলাকার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে বাসার সামনের ফুটেজে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়া আমরা ওই এলাকায় কেমন চুরির ঘটনা ঘটে সেগুলোও তদন্ত করছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে।

/এমআইকে