নিশীতা মিতু
১১ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
বেঁচে থাকার জন্য সবাই ই খাবার খায়। তবে কে কীভাবে খাবে এটি সম্পূর্ণ নিজস্ব বিষয়। এই যেমন নোয়াখালী অঞ্চলে অনেক তরকারিতে নারকেল খায়। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে এমনটা হয় না। আবার উত্তরাঞ্চলে তরকারিতে হলুদ-মরিচের গুঁড়া একটু কম ব্যবহার করা হয়, সিলেটের দিকে ঠিক তার উল্টো।
উপাদান এক হলেও অঞ্চলভেদে রান্নার প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে থাকে। দেশ ভেদেও রান্নার ধরন আলাদা হয়। এই যেমন বর্তমানে ট্রেন্ড চলছে পেশোয়ারি গোশতের। কেবল লবণ আর নামমাত্র গোটা মসলা দিয়ে গরু/খাসির মাংস সেদ্ধ করে ভিনদেশী এই পদটি তৈরি করা হয়। অনেকেই খাবারটি চেখে দেখছেন। কেউবা প্রশংসা করছেন স্বাদ নিয়ে। কেউবা বলছেন এটি খাওয়ার অযোগ্য।
আরও পড়ুন- বিফ কোরমা রেসিপি
পেঁয়াজ মসলা ছাড়া রান্না মাংস কি সুস্বাদু?
মাংসের কোনো পদ বললে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভাসা তেল আর হলুদ-মরিচের মিশেল লালচে রঙের কোনো খাবার। পেঁয়াজ একটু বাড়িয়ে, হরেক রকম বাটা মসলা আর গুঁড়া মসলা কষিয়ে রান্না করা হয় গরু বা খাসির মাংস।
কিন্তু পৃথিবীর সব দেশে এভাবে মাংস রান্না করা হয় না। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অনেক স্থানে কেবল লবণ আর নামমাত্র কিছু গোটা মসলা দিয়ে মৃদু আঁচে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হয় মাংস। ক্ষেত্রবিশেষে এর সঙ্গে দেওয়া হয় আস্ত আলু। ভিন্নধর্মী এই পদের নাম পেশোয়ারি নামকিন গোশত বা পেশোয়ারি বিফ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পেঁয়াজ মসলা ছাড়া রান্না মাংস কি সুস্বাদু? এর উত্তর হ্যাঁ নাকি না হবে তা নির্ভর করবে ব্যক্তির জিভের স্বাদ বা টেস্ট বাডের ওপর। যারা বিভিন্ন অঞ্চল বা দেশের অথেনটিক খাবার চেখে দেখতে ভালোবাসেন তাদের কাছে খাবারটি ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে। তবে যিনি রান্না করছেন তিনি কতটা মূল প্রণালি মেনে রান্না করছেন আর কতটা খাঁটি উপাদান দিয়ে রান্না করছেন তার ওপরও স্বাদ অনেকটা নির্ভর করে। যেমন চট্টগ্রামের মেজবানি মাংস, জামালপুরের মিল্লি, কিংবা খুলনার চুইগোস্ত ঢাকা বা অন্য জেলায় পাওয়া গেলেও, অথেনটিক স্বাদ মেলে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
আবার যারা সবসময় তেল মসলায় মাখো মাখো ভুনা মাংস খেয়ে অভ্যস্ত তাদের কাছে এই খাবারটির স্বাদ পানসে মনে হতে পারে। তরকারির রঙ আর স্বাদ তাদের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে।
আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, বাংলাদেশে অনেক বাবুর্চি বা রাঁধুনির দাবি পাকিস্তানি এই পদটি কেবল লবণ আর ঘি মেশানো পানি দিয়ে সেদ্ধ করেই রান্না হয়। এই ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। এই রান্নার পেয়াজ-রসুন সবই ব্যবহার করা হয় তবে কম পরিমাণে আর আস্ত।
আপনি কি পেশোয়ারি গোশতের স্বাদ চেখে দেখতে চান? তাহলে কিন্তু ঘরেই ভিনদেশী পদটি রান্না করতে পারেন। চলুন জেনে নিই রেসিপি-
আরও পড়ুন- কোন রোগে আক্রান্তরা কতটুকু মাংস খাবেন
উপকরণ
চর্বি ও হাঁড়সহ গরু/খাসির মাংস- ২ কেজি
ঘি- ৩ টেবিল চামচ
আদা- বড় ১ টুকরা
রসুন- বড় ২ টা
দারুচিনি- ২-৩ টুকরা
লবঙ্গ- ৩/৪ টা
পেঁয়াজ বড়- ২/৩ টা
টমেটো মাঝারি- ৩ টা
গোলমরিচ- ১০/১২ টা
কাঁচামরিচ- ৫/৬ টা
লবণ- স্বাদমতো
প্রণালি
এই পদে চর্বি একটু বেশি রাখতে হয়। প্রথমে গরু বা খাসির মাংসে ভালোভাবে লবণ মেখে রেখে দিতে হবে ৩০ মিনিট। যে হাড়িতে রান্না করবেন, প্রথমে তার নিচে এক স্তর চর্বি বিছিয়ে নিন। এরপরের স্তরে হাঁড় রাখবেন। ওপরের স্তরে রাখুন মাংস।
এবার টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, গোলমরিচ, কাঁচামরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ দিয়ে ঢেকে দিন। আটা দিয়ে ঢাকনার চারপাশ আটকে নিন। শুরুতে ৫ মিনিট মধ্যম আঁচে এবং এরপর একেবারে মৃদু তাপে রান্না করতে হবে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।
মাঝে এবার খুলে প্রয়োজন বুঝে গরম পানি যোগ করতে পারেন। এই পদটি ঝোল অনেকটা নিহারির মতো হবে। আপনি যদি এমনটা না চান তাহলে পানির পরিমাণ কম দিতে হবে। চাইলে কয়লার আগুনে এ পদটি করতে পারেন। এই মাংস একদম নরম তুলতুলে হবে।
রুটি বা ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার পেশোয়ারি গোশত। চাইলে নানের সঙ্গেও খেতে পারেন। এতে শুধু লবণ ছাড়া কোন গুঁড়া বা বাটা মসলা ব্যবহার করা হয় না বলে মাংসের স্বাদ খুব ভালোভাবে বোঝা যায়। তবে ভালো স্বাদ পেতে তাজা ও ভালো মানের গরু/খাসির মাংস নিতে হবে।
এনএম