লাইফস্টাইল ডেস্ক
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৬ পিএম
চায়ের সঙ্গে বাঙালির প্রেম বহু বছরের। কফির প্রতি ভালোবাসাটাও কম নয়। চা/কফির কাপে চুমুক না দিলে যেন সকাল শুরু হয় না অনেকের। কাজে মেলে না শক্তি। অলসতা ছাড়াতে এই দুই পানীয়র বিকল্প ভাবা যায় না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, অফিসের কাজের চাপ কিংবা একাকী সন্ধ্যা— সঙ্গী হয় চা বা কফি।
কেউ বলে চা-কফি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আবার কেউবা করে কড়া মানা। মনে তাই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক চা-কফি পান করলে কি আসলেই ক্ষতি হয়? সম্প্রতি এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী। চলুন জানা যাক তিনি কী বলেছেন-
চা’এর গুণের শেষ নেই
এক কাপ চা তে আছে ১৪ থেকে ১৭ গ্রাম ক্যাফিন। মুড বুস্ট করতে সাহায্য করে এই উপাদানটি। এ জন্য চা পানের পর দেহ-মন চাঙা হয়ে উঠে। একাধিক উপকারী উপাদানের উৎস এই পানীয়টি। হার্টের জন্য চা উপকারি। নিয়মিত চা পানের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের মতো শারীরিক সমস্যাও এড়ানো যায়।
আরও পড়ুন- ‘কফি না হলে যেন দিনই সার্থক হয় না’
সেরা পানীয় কফি
কফিও কোনো অংশে চায়ের চেয়ে কম উপকারি নয়। প্রতি ১ কাপ কফিতে ৯৫ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। এটি উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা রোধে কাজ করে। নিয়মিত কফি পানে হার্ট সংক্রান্ত অসুখ থেকে শুরু করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গলস্টোন, পার্কিনসনস ডিজিজের মতো অসুখের আশঙ্কা কমে। এ জন্য কফি পান করা যেতে পারে।
চা আর কফি দুটোই আসলে শরীরের জন্য উপকারি। তাই বলে যখন তখন ইচ্ছেমতো এই পানীয় পান করা যাবে না। তাহলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।
রাতে চা-কফি খেলে কী হয়?
পুষ্টিবিদদের মতে, রাতে চা-কফি এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এসব পানীয়তে থাকা ক্যাফিন রাতের ঘুম নষ্ট করে দিতে পারে। এটি বারবার প্রস্রাবের কারণও হতে পারে। অনেকে মধ্যরাতে চা-কফি পান করেন। এই অভ্যাস ছাড়াই ভালো। তবে সন্ধ্যার নাশতায় চা-কফি পান করতে পারেন।
দিনে কত কাপ চা-কফি পান করা যাবে?
উপকারি হলেও দিনে ২ থেকে ৩ বারের বেশি চা-কফি পান করা উচিত নয়। এসব পানীয় বেশি পরিমাণে পান করলে শরীরে বিপাকের হার বিঘ্নিত হতে পারে। কমে যেতে পারে ক্ষুধাভাব। অতিরিক্ত চা-কফি পান করলে শরীরে ঠিকমতো আয়রন শোষণ হয় না। ফলে দেখা দিতে পারে অ্যানিমিয়ার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা।
আরও পড়ুন- পরিচিত যে পানীয় বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি
চা-কফিতে কি দুধ-চিনি মেশানো যাবে?
এতক্ষণ নিশ্চয়ই খুশি হয়েছিলেন পছন্দের পানীয় পানে বাধা নেই বলে। তবে এতে কিন্তু দুধ-চিনি মেশানো চলবে না। পুষ্টিবিদরা তেমনটাই বলেন। দুধ বা চিনি মেশালে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। বেড়ে যাবে ওজন। সুস্থ-সবল থাকার জন্য তাই দুধ-চিনি ছাড়াই চা-কফি পানের অভ্যাসের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চা-কফি পানের ক্ষতিকর দিক
চা আর কফিতে আছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। এই উপাদানটি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি, তেমনি ক্ষতিকরও। অতিরিক্ত ক্যাফেইন পানে ব্যক্তি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কফির প্রতি আসক্তি থাকলে একসময় দুশ্চিন্তা, বিরক্তিভাব, রাগ, নিদ্রাহীনতা, জড়তা, প্যানিক অ্যাটাকের মত মানসিক জটিলতার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন- এভাবে কফি পানে এক সপ্তাহেই কমবে ওজন
চায়ের পিএইচ ভ্যালু ৬ ও কফির ৫। কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হসপিটাল ও মেডিকেল রিসার্স ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, এই পানীয়গুলো অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে থাকে। একই সঙ্গে আলসার ও ক্যানসারের মতো কঠিন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চা বা কফি পানের পর পানি পান করলে তা বদহজম ও লুজ মোশনের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে ঠান্ডা লাগার মতো সমস্যা। কারও কারও গলা ব্যথাও হয়ে থাকে। এই অভ্যাস দাঁতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন- কফির প্রতি আসক্তি কমাতে করণীয়
চা-কফি আসক্তি কমানোর উপায়
যেহেতু অতিরিক্ত চা-কফি পান করে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই এই অভ্যাসে লাগাম টানাই জরুরি। এই আসক্তি কমাতে বেশি করে পানি পান করুন। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পানের অভ্যাস করুন। এসব পানীয়র বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন হারবাল-টি অথবা ব্ল্যাক-টি।
খাদ্য তালিকায় রাখুন শাকসবজি ও শস্য জাতীয় খাবার। মাংস, চিনি, ময়দা ইত্যাদির পরিমাণ কমিয়ে দেন। ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি যেন না হয় সেদিকেও নজর দিন। ভিটামিন সি, বি-কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার খান। এগুলো শরীরের এনার্জি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এনএম