images

আইন-আদালত

আদালত চত্বর থেকে কাঁচা ফল সংগ্রহে বিধি-নিষেধ আরোপে আবেদন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৫ মে ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালত চত্বরে ফলজ গাছের কাঁচা ফল সংগ্রহে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পশুপাখিদের প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের নিশ্চয়তায় পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে।

সোমবার (১৫ মে) প্রধান বিচারপতির কাছে এই আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম আরিফ মন্ডল।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো ওই আবেদনের কপি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব ছাড়াও পরিবেশ সচিব, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।

>> আরও পড়ুন: বিচারকদের চিন্তা-চেতনায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে হবে: আইনমন্ত্রী

আবেদনে আইনজীবী এস এম আরিফ মন্ডল জানান, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ বাংলাদেশের সমস্ত আদালত চত্বরে বিভিন্ন ফলজ গাছ রয়েছে। ঋতুবিশেষে ফুলে-ফলে আদালত চত্বরে সুগন্ধ বিরাজ করে। গাছে গাছে ফুল ফোঁটার পর থেকে ফল পাকা অবধি বুলবুলি, টিয়া, কাক, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এছাড়াও বানর, কাঠবিড়ালী, বাদুর, শিয়ালের মতো পশুরাও আদালত চত্বরে পাকা ফলের সুমিষ্ট গন্ধে গাছের আশপাশে বিচরণ করতে থাকে। আর এভাবেই দিনের পর দিন পশুপাখিরা ফলগুলো পাকার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।

আবেদনে আরও জানানো হয়, সপ্তাহের বিচারিক কার্যক্রম চলাকালীন দিনগুলোতে বিচারপ্রার্থী আইনজীবী ও বিচার সংশ্লিষ্ট অন্যদের পদচারণার কারণে গাছে গাছে পাখিদের কিচিরমিচির সীমিত থাকে। কিন্তু রাত হলেই নির্জন আদালত চত্বরে পশুপাখিরা তাদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পায়। এভাবেই আদালত চত্বরের গাছে বসবাসকারী পশুপাখিদের জীবনচক্র চলতে থাকে। পশুপাখিরা সাধারণত পাকা ফল খেয়ে জীবনধারণ করে। অনেক সময় দেখা যায় চত্বরে গাছের কাঁচা ফলগুলো আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে রাত্রিবেলা হারিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে আদালত প্রাঙ্গণে উন্মুক্তভাবে বেড়ে ওঠা পশুপাখিগুলো তাদের ন্যায্য প্রাকৃতিক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের খাদ্যচক্রের ব্যাঘাত ঘটছে।

>> আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা করার আবেদন

আবেদনে আইনজীবী এস এম আরিফ মন্ডল বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদালত চত্বরে গাছের ফলমূলগুলো সংশ্লিষ্ট পশুপাখিরা যাতে একচ্ছত্রভাবে খাবার হিসেবে খেতে পারে- তা নিশ্চিত করা আমাদেরই দায়িত্ব। দেশের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিদ্যমান পরিবেশ বিষয়ক আইনগুলো কার্যকর করতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন আদেশ, রায় নির্দেশনা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জীব সম্পদের খাদ্যচক্র নিশ্চিত করা আমাদের বিচার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও দায়বদ্ধতা আছে। আদালত চত্বরে বেড়ে উঠা পশুপাখির জীবন যাতে অযাচিত হুমকির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

আবেদনে এই আইনজীবী আরও উল্লেখ করেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণে আদালত চত্বরকে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বা ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রজাতিগত ও প্রতিবেশ বৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালত চত্বরে সতর্কতামূলক নীতি গ্রহণ করা আবশ্যক। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন-২০১৭ এর ধারা ৩২ অনুযায়ী দেশের সকল আদালত চত্বরকে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান হিসেবে ঘোষণা করার দাবি রাখে। এর ফলে আদালত চত্বরে গাছে বসবাসকারী প্রাণীগুলো টিকে থাকবার সক্ষমতা অর্জন করবে। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণ সংশ্লিষ্টদের গাছ থেকে কাঁচা ফল অপরিকল্পিতভাবে আহরণ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক।

>> আরও পড়ুন: হেফাজতে মৃত্যু: বরখাস্তকৃত ২ পুলিশকে জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ

এত আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এবং জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আদালত চত্বরে গাছের পাকা ফল প্রাকৃতিকভাবে পশু পাখিরা যাতে খেতে পারে তা সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে। এর ফলে এই চত্বর সংশ্লিষ্ট প্রাণীদের খাদ্যচক্রে কিছু অংশে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সঠিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আদালত চত্বরকে প্রাকৃতিক পরিবেশবান্ধব চত্বর ঘোষণার লক্ষ্যে আদালত প্রাঙ্গণের ফলাদি গাছেই সংরক্ষণপূর্বক পশুপাখিদের খাদ্যচক্র নিশ্চয়তার সঠিক নির্দেশনা আবশ্যক। তাই পরিবেশ বৈচিত্র্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের খাদ্যচক্র বাধাহীনভাবে রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল জেলার আদালত চত্বরে ফলাদি আহরণে বিধি-নিষেধ আরোপের আদেশ দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন এই আইনজীবী।

এআইএম/আইএইচ