images

আইন-আদালত

শেখ হাসিনা-সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩২ এএম

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় গ্রেফতার ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন নির্ধারিত রয়েছে আজ।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আদেশ দেবেন। ফলে আসামিদের বিচার শুরু হবে কি হবে না তা জানা যাবে। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ মোট আসামি ১৭ জন। মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র‌্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

এর মধ্যে গ্রেফতার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন— র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেফতার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সাতজনের হয়ে লড়েন তাবারক হোসেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম, তিনজনের পক্ষে সুজাদ মিয়া ও শেখ হাসিনার হয়ে লড়েন আইনজীবী মো. আমির হোসেন। শুনানিতে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা কারণ (গ্রাউন্ড) এনে নিজেদের মক্কেলের অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে প্রসিকিউশনের পক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদন করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে, ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে টিএফআই সেলের বীভৎসতা তুলে ধরার পাশাপাশি গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক নতুন বাংলাদেশ উদিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য দুভাবে নির্ধারণ হতো বলেও উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ভাগ্য ভালো হলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো। দ্বিতীয়ত, সাত-আট বছর গুম রাখার পর ফেলে রাখা হতো অন্য কোনও অজানা জায়াগায়।

১০ কর্মকর্তাকে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন আদালত। ৮ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধেই ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ: জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সারা দেশে সংঘটিত ব্যাপক মাত্রায়, পদ্ধতিগতভাবে এবং লক্ষ্য নির্ধারণপূর্বক (Widesprade, Systematic and Targeted) অপরাধ সংঘটিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ ও ১৯ জুলাই রামপুরা ও এর আশপাশের এলাকায় মোট ২৮ জনকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ-১: বিটিভি ভবনের সামনে মেহেদী আলমকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও গঙ্গাচরণ রাজবংশীকে গুলি করে হত্যা করার অপরাধ।

অভিযোগ-২: মো. মামুন মিয়া সহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা ও মো. কাওসার হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মারাত্মক জখম করার অপরাধ।

অভিযোগ-৩: মো. মোস্তফা জামান সমুদ্রসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা ও লিয়াকত হোসেনসহ ৫ জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মারাত্মক জখম করার অপরাধ।

অভিযোগ-৪: মো. রাকিব হোসেনকে গুলি করে হত্যা ও ভিকটিম মো. উজ্জ্বল হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মারাত্মক জখম করার অপরাধ।

অভিযোগ-৫: তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ২ জনকে গুলি করে হত্যা করার অপরাধ।

অভিযোগ-৬: রাসেল মিয়াসহ ১২ জনকে গুলি করে হত্যা ও ভিকটিম মাসুম আহমেদসহ ৮ জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মারাত্মক জখম করার অপরাধ।

এফএ