images

আইন-আদালত

এই বিচার দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়: চিফ প্রসিকিউটর

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২২ পিএম

র‍্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে যে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে, তা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে গুমের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, র‍্যাবের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে, তাদের ভার্চ্যুয়ালি শুনানির সুযোগ দিতে একজন আইনজীবী আবেদন করেছিলেন। আদালত তা নাকচ করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই বিচারকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন, যা শুনানিতে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, আদালত স্পষ্ট করেছেন যে এই বিচার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমরাও বলেছি, এটি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো বিচার নয়। কারণ, আসামিরা সামরিক শৃঙ্খলার বাইরে থেকে এসব গুরুতর অপরাধ করেছেন। তখন তারা র‍্যাবের দায়িত্বে ছিলেন। এসবই মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে। সেই কারণে বিশেষ সুবিধার আবেদন আদালত খারিজ করেছেন।

আদালত বলেন, আইনের চোখে সব নাগরিকই সমান। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুরুতর। তাই সবাই সমান সুবিধাই পাবেন। রায় না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্দোষ বিবেচিত হবেন। তবে আসামি হিসেবে প্রচলিত যে সুবিধা থাকে, তার বাইরে অতিরিক্ত কিছু পাবেন না।

র‍্যাবের টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেছে প্রসিকিউশন। আসামিপক্ষ অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছে। সময় চাওয়ায় পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে সকাল ১০টার পর ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান লেখা সবুজ রঙের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তাঁরা হলেন র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

পলাতকদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র‍্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

২৩ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন নিয়ে আজকের দিন ধার্য করা ছিল। গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল–১। পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাঁদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করে আদালত। ৮ অক্টোবর মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয়।

এআর