আমিনুল ইসলাম মল্লিক
১৬ জুলাই ২০২৫, ১০:২২ পিএম
দীর্ঘদিন পর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপির পরেই আলোচনায় দলটি। একটা সময় বিএনপির জোটসঙ্গী থাকলেও এখন স্বতন্ত্র বলয় ও জোট গঠনে মরিয়া জামায়াত। ইতোমধ্যে দলটি ৩০০ আসনেই ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে।
তবে ইসলামি ও ডানপন্থী বেশ কিছু দল নিয়ে বৃহৎ জোট গঠনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। এই জোট হলে দলটি আগামী নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসার সুযোগ না পেলে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে জামায়াত ও তাদের জোট।
জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় দলীয় নেতাদের পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী। দেশের উচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত এই নেতারা আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন
পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার একাংশ) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে দলের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনের নাম ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। নাজিবুর রহমান মোমেন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে ২০১০ সালে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৩ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে ২০১৬ সালের ১০ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তিনি লন্ডনে চলে যান। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে দেশে ফিরেন।
অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার
ঢাকা-১০ আসনে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সাবেক চাকসু ভিপি, সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। ভোটের জন্য ইতোমধ্যে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন।
অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ
ময়নসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার বিভাগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। তিনি আইন পেশা ও দলীয় কর্মকাণ্ডে সমান সক্রিয়। দলের প্রচার বিভাগ সামলাচ্ছেন তিনি। এর ফাঁকেও প্রায়ই নিজ এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন এই জামায়াত নেতা।
মোহাম্মাদ শিশির মনির
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির। ইতোমতে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল।
শিশির মনির বলেন, দিরাই-শাল্লায় উন্নয়নের নামে বিগত দিনে অনেক লুটপাট হয়েছে। এখানকার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। আমি নতুন এক দিরাই-শাল্লা উপহার দিতে চাই। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতেই সংসদে যেতে চাই। আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল। এখানে জনসাধারণের প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরতে এসেছি। কোনো দুর্নীতিবাজকেই আমি সুবিধা করতে দেব না।’
বেশ কিছু জাতীয় ও রাজনৈতিক মামলার আইনজীবী হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘পলিটিক্স হওয়া উচিত একটা ফেয়ার গেইম, জোরজবরদস্তিমূলক নয়। কোনো এক সময়ে জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা-প্রত্যাশাগুলো পূরণ করার সংকট ছিল। আমি যদি জনগণের মনে জায়গা করে নিতে পারি, তাহলে নির্বাচনে আসব, নইলে নয়।’
ব্যারিস্টার আরমান বিন কাসেম
আওয়ামী সরকারের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যদণ্ডের সাজা কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য মীর কাশেম আলীর ছেলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান বিন কাশেম নির্বাচন করবেন ঢাকা-১৪ আসন থেকে। তিনি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে গুমের শিকার হয়ে নিখোঁজ ছিলেন আট বছর। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি ফিয়ে আসেন পরিবারের কাছে। ইতোমধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের বিচার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান
চট্টগ্রাম-১ আসন (মিরসরাই) ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি। এই জনপদে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) অবস্থিত। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই উপজেলাটি আগামীর নতুন বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন হিসেবে বিবেচিত।
৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ায় এখানে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। নির্বাচনে আসন না পেলেও সাম্প্রতিক সময় ভোটের বাজারে সমর্থন বাড়ছে জামায়াতের। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান। ছাত্রজীবনে তিনি শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান
ঢাকা-১১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। তিনি ১৯৯৫ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করে ২০১৬ সালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে। ২০১৯ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে অদ্যবধি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন
ফেনী-১ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বাংলাদেশের মানুষকে একটি সুন্দর পরিবেশ দিয়েছেন। আমরা আমাদের সকল শক্তি দিয়ে দুর্নীতি, দখলবাজ, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম
ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম।
এছাড়া আইনজীবীদের মধ্য থেকে ঢাকা-১৬ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন নিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেন।
এআইএম/জেবি