images

আইন-আদালত

আ.লীগ সরকারের পিপি-জিপিরা বহাল, ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা

আমিনুল ইসলাম মল্লিক

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২০ পিএম

সরকার পক্ষে সারাদেশের জেলা আদালতগুলোতে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও গভার্নমেন্ট প্লিডার (জিপি)। ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেন পিপি আর দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করেন জিপি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা আদালতগুলোতে পরিবর্তন করা হয়নি সেই সরকারের নিয়োজিত পিপি-জিপিদের। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নতুন সরকারের সংস্কার। ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।

সাধারণত এসব পদে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। বেশির ভাগ পিপি-জিপি আওয়ামী লীগ দলীয় হওয়ায় তাদের অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আদালতে যাওয়ার সাহস করছেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ইন্ধন দেওয়ায় কারও কারও বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে হত্যা মামলাও। প্রায় দুই মাস ধরে তারা আদালতে উপস্থিত না থাকলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা ঠিকই ভোগ করছেন। আবার যারা আদালতে হাজির হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে আওয়ামী লীগ প্রীতির অভিযোগ। তারা আওয়ামী লীগের লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পেছনে কাজ করছেন।   

আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া পিপি-জিপিরা আদালতে উপস্থিত না থাকার কারণে মামলায় সাক্ষী নেওয়া হচ্ছে না, রায়-ডিক্রি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। এতে করে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যত দ্রুত সম্ভব সারাদেশের আদালতগুলোতে আগের পিপি-জিপিদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে লোক নিয়োগ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা। না হলে বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এ পদগুলোতে নতুন লোক না বসানোর কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে বিচার বিভাগের। ভোগান্তিতে পড়ছেন বিচারপ্রার্থীরা। দ্রুত এগুলো চেঞ্জ করা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন

থমকে আছে বিচার কাজ, বিচারক নিয়োগ কবে?

মামলা প্রত্যাহারেও ‘ঘাম ছুটছে’ তাদের

এই আইনজীবী নেতা বলেন, ‘আমাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ফ্যাসিস্টের এক দোসরকে। আমরা প্রতিবাদ করায় সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু নতুন করে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দুই/একজন বাদে পুরোনোরাই দায়িত্বে আছেন।’

যত দ্রুত সম্ভব সারাদেশের আদালতগুলোতে আগের পিপি-জিপিদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে এই পদে লোক নিয়োগ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জ জেলা বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি রফিক সরকার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া পিপি-জিপিরা দায়িত্ব পালন করছেন না ঠিকমতো। কিন্তু মাস শেষে তারা সরকারের সুযোগ-সুবিধা ঠিকই নিচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার।’

CC

সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির কর্নেল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এখনো বহাল তবিয়তে আছেন সারাদেশের পিপি জিপিসহ সরকারপক্ষে কাজ করা অন্যান্য আইনজীবীরা। তাদের কারণে অপরাধে জড়িত আওয়ামী লীগের অনেক সন্ত্রাসী জামিন পাচ্ছে। পিপি জিপিরা বাধা দিচ্ছেন না। এগুলো দ্রুত চেঞ্জ করে নতুন করে পিপি-জিপি নিয়োগ দিতে হবে। নচেৎ সরকারের সংস্কার পদক্ষেপ ধ্বংস হবে।’

পিপি-জিপি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এত দেরি হচ্ছে কেন, এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণলায়ের সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। জানতে চেয়ে একাধিকবার ফোন করা হয় আইন মন্ত্রণালয়েল সচিব গোলাম রব্বানীকে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করছেন না। এই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. রেজউল করিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বলছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজ্ঞরা

আদালত চত্বরে আসামির ওপর হামলা, যা বলছেন আইনজ্ঞরা

আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন অ্যাটর্নি জেনারেলসহ মোট ১৭৪ জন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ৫০ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ৯৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে যথাক্রমে ৩৭ ও ২৩ জন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে মোট ২১ জন এ,ও,আর (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোতে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ৬৪ জন জিপিসহ মোট ৭০০ আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জিপি, এজিপি ও এলজিপি), রাষ্ট্রপক্ষে ফৌজদারী মামলা পরিচালনার জন্য ৬৪ জন পিপিসহ মোট ২৫২০ জন আইন কর্মকর্তা (বিশেষ পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনূস। তার সরকার সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল, তিন জন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৭৫ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, ১৬১ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ২৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। তবে সারাদেশে পিপি ও জিপি পর্যায়ে এখনো রদবদল করেনি সরকার।

এআইএম/জেবি