আমিনুল ইসলাম মল্লিক
২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:১৯ এএম
নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচন। হামলা-মামলাসহ নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নীল প্যানেল সভাপতিসহ চার পদে বিজয়ী হয়। আর আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের সাদা প্যানেল জয় পায় দশ পদে।
ভোটে জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফলের অভিযোগ এনে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সেজন্য নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ না করতে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। এমন অবস্থায় কী করবেন তা নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এছাড়া আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মেইলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম মল্লিক।
ঢাকা মেইল: সরকারে আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থায় সভাপতি হিসেবে বারের উন্নয়নমূলক কাজ করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে কি না?
ব্যারিস্টার খোকন: আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন সেটি গঠনতন্ত্রে বলা আছে। এখানে প্রত্যেকে আলাদা-আলাদা কাজ করবেন। সভাপতি সম্পাদকসহ অন্যান্য পদের নেতাদের দায়িত্ব পৃথক। তারা প্রত্যেকে যার যার দায়িত্ব পালন করবেন। আমি মনে করি বারের উন্নয়নমূলক কাজে আমার কোনো সমস্যা হবে না। আমি বারের সদস্যদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চাই। সুপ্রিম কোর্ট বারের তিনটি বিল্ডিং এনেক্স ভবন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ভবন, সোহরাওয়ার্দী ভবন নির্মাণে আমার সহযোগিতা ছিল প্রত্যক্ষভাবে। এই তিনটি ভবনের উন্নয়নমূলক কাজের সময় আমি বারের নেতা ছিলাম। বারের দুইবার সদস্য ও সাতবার সেক্রেটারি ছিলাম।
ঢাকা মেইল: বারের নারী সদস্যদের বসার জায়গা সংকট। এ বিষয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নিতে চান?
ব্যারিস্টার খোকন: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সব সদস্যদের জন্যই সুন্দর একটি বসার জায়গা দরকার। আমাদের আইনজীবীদের সংখ্যা অনেক। কিন্তু বসার জায়গা সংকুলান হওয়ায় সবাই ভালোভাবে বসতে পারেন না। এখানে নারী পুরুষ আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। সবার জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা নেই। বার কাউন্সিল আইনজীবী সনদ দিচ্ছে। দিন দিন আইনজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বসার জায়গা বাড়ছে না। সবাই যেন ভালোভাবে বসে আইন পেশায় মনোযোগী হতে পারেন, এমনটা আমি চাই।
ঢাকা মেইল: সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। বারের সদস্যদের জন্য কী কী পরিকল্পনা নিতে চান?
ব্যারিস্টার খোকন: আমি সবেমাত্র নির্বাচিত হয়েছি। এখনো শপথ নেইনি। পুনরায় নির্বাচন হলে ভিন্ন কথা। আর যদি তা না হয় তাহলে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে আমি একজন। দেখা যাক নির্বাচন নিয়ে কী হয়। আমি বারের দায়িত্ব নেওয়ার পর কী কী কাজ করব সেই পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনার কথা এখনই বলতে চাচ্ছি না।
ঢাকা মেইল: আপনি আইনজীবী সমিতির কতবার নেতা নির্বাচিত হয়েছেন?
ব্যারিস্টার খোকন: আমি এই বারের একজন নিয়মিত সদস্য। নিয়মিত আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট বার একটি প্রেস্টিজিয়াস সংগঠন। এই বারের নির্বাহী সদস্য হিসেবে আমি দুইবার নির্বাচিত হয়েছি। আমি যখন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম, তখন সভাপতি ছিলেন প্রয়াত ওজায়ের ফারুক স্যার। এরপর আমি সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্যদের ভোটে সাতবার সদস্য নির্বাচিত হই। নির্বাচিত হওয়ার পর আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি বারের মেম্বারদের জন্য কাজ করতে।
ঢাকা মেইল: বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ আছে, তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
ব্যারিস্টার খোকন: ন্যায়বিচার পাওয়া সাধারণ বিচারপ্রার্থীর প্রত্যাশা। আমাদের সংবিধান সে অধিকার তাদেরকে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসব। তাদের সঙ্গে বার বার বসব। বার ও বেঞ্চ একটি পাখির দুটি ডানা। এই দুটি ডানা ভালোভাবে সমন্বয় করে চললে সাধারণ বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।
ঢাকা মেইল: আপনার দল থেকে একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে সভাপতি হিসেবে আপনি যেন দায়িত্ব না নেন?
ব্যারিস্টার খোকন: আমি নির্বাচিত। দায়িত্ব নেওয়া বা না নেওয়ার কী আছে। কে কী বলল সেটা দেখার বিষয় নয়। আমার জীবনে পরাজয়ের কোনো ইতিহাস নাই। তবে পুনর্নির্বাচনের দাবির সঙ্গে আমি একমত।
ঢাকা মেইল: বারের ভোট গণনায় জালিয়াতি হয়েছে কি না। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
ব্যারিস্টার খোকন: আমি কিন্তু ওই দিনই ভোট পুনগণনার দাবি করেছি। আমার সেই আবেদন তখন কমিশন গ্রহণ করেনি। পুরো প্যানেলে আমরা কমপক্ষে ১৩ জন এগিয়ে ছিলাম। পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আমরা এখনোও অটল। আমার সভাপতি পদেও আমি পুনর্নির্বাচন চাই। পুনর্নির্বাচন হলে আমি খুশি হব। আইনজীবীরা খুশি হবেন। আর পুনর্নির্বাচন যদি না হয়, আমি সভাপতি পদসহ চারটি পদে বিজয় হয়েছি। এখনতো আর পদত্যাগের সুযোগ নাই। তাছাড়া শুধু এই চার পদে পুনর্নির্বাচনেরও সুযোগ নাই।
এআইএম/এমআর