আমিনুল ইসলাম মল্লিক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম
২০০৪ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন গাইবান্ধার আব্দুর রাজ্জাক। হয়েছেন ঢাকা বারের সদস্যও। নিজ এলাকা গাইবান্ধায় স্থায়ী হতে ২০১০ সালে বার পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিতে ভর্তির জন্য দশ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। টাকা দেওয়ার পরও আইনজীবী সমিতিতে ভর্তি তো দূরের কথা, উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরে তিনি গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে অভিযোগ করেন। দীর্ঘ ১৪ বছর আইনি লড়াই শেষ করে বিজয়ী হন আব্দুর রাজ্জাক।
জানা যায়, ২০১০ সালের গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতিতে ভর্তির আদেশ পান আব্দুর রাজ্জাক। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল বার কাউন্সিল এই আদেশ দেয়। এজন্য এ সংক্রান্ত একটি পত্র ইস্যু করা হয়। সেই পত্র মোতাবেক আব্দুর রাজ্জাক জেলা আইনজীবী সমিতিতে ভর্তি হতে দশ হাজার টাকা জমা দিলেও তাকে ভর্তি করেনি গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতি। আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ- তাকে ভর্তি না করে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তখন বার কাউন্সিলে একটি আপিল মামলা করেন। এরপর হয়রানি আরও বাড়লে আব্দুর রাজ্জাক গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবর আবারও নোটিশ পাঠান।
পরে তিনি বার কাউন্সিলের আপিল নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়ে রিট করেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি রুল জারি করেন বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১৪ মে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানি না করতে এবং বার কাউন্সিলের আপিল মামলা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের আদেশের পর বার কাউন্সিল ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রাজ্জাককে গাইবান্ধার জেলা আইনজীবীতে সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেয়। আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ, বার কাউন্সিলের আদেশের পরও গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতি তাকে সদস্য হিসেবে যুক্ত করেনি।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা নিষ্পত্তি চেয়ে ২০১৮ সালের ২০ মে আরেকটি রিট করেন আইনজীবী রাজ্জাক। শুনানি শেষে ওই বছরের ২৫ মে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট বিচারপতি জোবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আব্দুর রাজ্জাককে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিতে সদস্য করে নিতে আদেশ দেন।
দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে বার কাউন্সিল তাদের অধীনে থাকা বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ ছিল। এই ব্যর্থতাকে দূর করতে পেরেছে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে। দীর্ঘ ১৪ বছর আইনি লড়াই করতে গিয়ে আমি সহায়-সম্পদ হারিয়েছি। পাশাপাশি মানসিকভাবেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট বারে নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন আব্দুর রাজ্জাক। বসছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের এনেক্স ভবনের ২০০৮ নং রুমে। এখন তিনি নিয়মিতভাবে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিতে আইনি প্র্যাকটিস করতে চান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমপ্লেইন্ট অ্যান্ড ভিজিলেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহম্মেদ রাজা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশনকে এনফোর্স করতে পারি না। আমাদের গঠনতন্ত্রে নেই এটা। তবে আমরা একটি আদেশ দিলে সেই আদেশ নৈতিকতার সঙ্গে তাদের মানা উচিত। তারা না মানলে আমরা তাদের জোর করে মানাতে পারি না।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আর রাজ্জাক সাহেবের বিষয়টি অনেক পুরোনো। আমি অ্যাডভোকেট রাজ্জাক সাহেবের ফাইল না দেখে এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।
বার পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো আইনজীবী বার পরিবর্তন করতে চাইলে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটি পরিবর্তন করতে হবে। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজ্জাক সাহেব আসতে চাইলে গাইবান্ধা বারের তো কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।
এআইএম/এমআর/আইএইচ