images

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে ‘সাজানো’ নির্বাচন তরুণদের বয়কট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম

মিয়ানমারে অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি চোখে পড়তো। 

কিন্তু রোববার (২৮ ডিসেম্বর) জান্তাশাসিত দেশটিতে শুরু হওয়া জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণে তাদের অনুপস্থিতি ছিল স্পষ্ট। সেই তুলনায় ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে বয়স্কদের বেশি দেখা গেছে। খবর এএফপির।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি ছেড়ে বহু মানুষ চলে গেছেন। 

তাদের মধ্যে রয়েছেন বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগের ৩৫ বছর বয়সসীমার অনেক পুরুষ কিংবা মিয়ানমারের স্থবির অর্থনীতি থেকে দূরে ভালো জীবিকার খোঁজে থাকা তরুণরা।

আর যারা দেশে রয়ে গেছেন, তারাও ভোটে অংশ নিতে খুব একটা আগ্রহী নন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গোষ্ঠী মিয়ানমারের জান্তার আয়োজিত এই নির্বাচনকে ‌‘‘সাজানো’’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন।

নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির মান্দালয়ের এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘ভোট দিতে যারা যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই বয়স্ক।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, কেউই এই বিশৃঙ্খলায় জড়াতে চায় না। মানুষ সম্ভবত এই নির্বাচনের সুষ্ঠুতায় বিশ্বাস করে না।’

ইয়াঙ্গুনের কেন্দ্রস্থলে সোনালি সুলে প্যাগোডার কাছের একটি ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়, ভোটারদের বেশির ভাগই প্রবীণ নাগরিক। শিশু কোলে নেওয়া মা এবং বাজারের ঝুড়ি হাতে গৃহিণীরা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।

স্থানীয় এক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ওই কেন্দ্রে নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন। ভোটগ্রহণ শেষ হতে দুই ঘণ্টার কম সময় বাকি থাকলেও কেবল ৫০০ জনের মতো ভোট দিয়েছেন।

মিয়ানমারের সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সেইন ই বলেন, ভোট দেওয়া সব নাগরিকের কর্তব্য। ৭৪ বছর বয়সী এই নারী বলেন, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সব নাগরিকের জন্য এটি একটি সুযোগ।

২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। ক্ষমতায় আসার পর দুই বছর আগে দেশটির সৈন্য সংখ্যা বাড়াতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ চালু করা হয়।

জান্তা সৈন্যরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে থাকা জাতিগত সংখ্যালঘু বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করছেন।

ওই শিক্ষক বলেন, আমি মনে করি না কোনও পরিবর্তন আসবে। আমার মনে হয়, এটি তাদের জন্য—সৈনিকের পোশাক বদলে বেসামরিক পোশাক পরা এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার ব্যবস্থা।

মিয়ানমারের জান্তা এই ভোটকে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন হিসেবে প্রচার করছে। দেশটির সাবেক সাংবাদিক সাতো ন্যা নিয়ো (৯৭) বলেন, আমি শিগগিরই ১০০ বছরে পা দেব। 

তিনি বলেন, আমি মিয়ানমারের নাগরিক। আমি নিজের জাতিসত্তা ও দেশকে ভালোবাসি। আমাকে সমর্থন জানাতেই হবে। তবে তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের সাক্ষী সুলে প্যাগোডার আশপাশের রাস্তাগুলো রোববার ছিল অস্বাভাবিক নীরব। 

শান্ত পরিবেশ ভেঙেছে কেবল ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে উৎসাহিত করা একটি গানের পুনরাবৃত্তি করে চলা সাউন্ড সিস্টেমের শব্দে, আর মাঝে মাঝে সশস্ত্র পুলিশ ও সেনাসদস্য বোঝাই ভ্যানের যাতায়াতে। 

জান্তা-শাসনবিরোধী দেশটির বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছে। স্যাগাইং অঞ্চলের পাল শহরের অভ্যুত্থানবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা বলেন, যাদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ইচ্ছা, যেতে পারেন। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে ভোট দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে যান।

তিনি বলেন, কিছু মানুষকে জোর করে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা বুঝেছি, ভোট দেওয়ার চাপ হিসেবে কারও কারও দিকে বন্দুক তাক করা হয়েছে।

ইয়াঙ্গুনে অনেক ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী কিংবা ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে জান্তা-ঘনিষ্ঠ পিপলস পাইওনিয়ার পার্টির প্রার্থী ওয়াই ফিও কিয়াও এসব উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া উচিত। তা না হলে, শেষ পর্যন্ত এমন কাউকেই পাবেন যাকে আপনি সমর্থন করেন না।

-এমএমএস