আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে কম্বোডিয়ার হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে থাইল্যান্ড। উভয় দেশের রাষ্ট্রনেতাদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেলিফোনের পর শনিবার সীমান্তে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে থাইল্যান্ডের অন্তত চার সেনা নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি বলেন, ‘সীমান্তের চং আন মা এলাকায় সংঘর্ষে শনিবার আরও চারজন সেনা নিহত হয়েছেন। গত সোমবার কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ থাই সেনা নিহত হয়েছেন।’
ব্যাংকক বলেছে, শনিবার কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী চার থাই সেনাকে হত্যা করেছে। এর আগে, কয়েক দিন ধরে চলা প্রাণঘাতী সংঘাতের অবসানে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ওই দাবি করেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নাকচ করে দেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সহিংসতা চলছে। উভয় দেশের ঔপনিবেশিক আমলের ৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) বিতর্কিত দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে এই সংঘাত চলছে।
থাই-কম্বোডিয়ার সীমান্ত সংঘর্ষে কেবল চলতি সপ্তাহেই অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শনিবার সীমান্ত এলাকায় কম্বোডিয়ার হামলায় নিহত চার থাই সেনাও রয়েছেন বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নতুন করে সংঘাত শুরুর জন্য উভয়পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, ‘শুক্রবার ফোনালাপে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি করা উচিত কি না— সে বিষয়ে কিছু বলেননি।’
শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অনুতিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। শুক্রবার অনুতিন ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে ‘খুব ভালো আলোচনা’ হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্প।’
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘তারা আজ সন্ধ্যা থেকেই সব ধরনের গোলাগুলি বন্ধ এবং জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত মূল শান্তিচুক্তিতে ফিরে যেতে রাজি হয়েছেন।’
পাঁচ দিনের প্রাণঘাতী সহিংসতার পর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অক্টোবরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে পরবর্তী একটি যৌথ ঘোষণার পক্ষে সমর্থন দেন ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি হওয়ার পর দুই দেশের মাঝে নতুন বাণিজ্য চুক্তির কথাও জানান তিনি।
তবে পরের মাসেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর ওই চুক্তি স্থগিত করে থাইল্যান্ড। দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত কানিয়াপাত সাওপ্রিয়া বলেন, ‘এখন আর কম্বোডিয়াকে বিশ্বাস করি না।’ ৩৯ বছর বয়সী এই নারী এএফপিকে বলেন, ‘শেষবারের শান্তি প্রচেষ্টা সফল হয়নি... এবারও হবে কি না, আমি জানি না।’
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষে ৭ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত বা গৃহহীন হয়েছে বলে খোলা কাগজ সূত্রে জানা গেছে, যেখানে সংঘর্ষে একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়েছেন। এই বাস্তুচ্যুতির ঘটনাটি মূলত সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের কারণে ঘটেছে, যা ১৯০৭ সালের ফরাসি মানচিত্র এবং প্রিয়াহ ভিহার ট্রায়াঙ্গেল (পান্না ত্রিভুজ) অঞ্চল নিয়ে বিতর্কের জের ধরে শুরু হয়েছিল।
সূত্র: এএফপি
এফএ