আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
আবার বাংলাদেশি সন্দেহে প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। এবার রাজ্যের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ১৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটত করেছে ওড়িশা পুলিশ।
শ্রমিকদের পরিবারের দাবি, বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি বলে লালগোলা এবং রঘুনাথগঞ্জের ১৭ জন শ্রমিককে রবিবার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর তাদের থানায় আটকে রেখে অত্যাচার করা হয়। এ নিয়ে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, ‘প্রথমে শ্রমিকদের ওড়িশার কেন্দ্রপড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আলাদা আলাদা করে কেন্দ্রপড়া টাউন, কেন্দ্রপড়া সদর, রাজনগর এবং আরও একটি থানায় রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে কেন্দ্রপড়া থানায় রাখা হয়েছিল ১২ জনকে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ আটক সবার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় বলে খবর পেয়েছি। ঠিকাদার শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকেও আটক করে হেনস্থা করেছে পুলিশ।’
এরআগে গত মঙ্গলবার রাতে একই রাজ্যের শমসেরগঞ্জে ১১ জন শ্রমিকে আটক করে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরদিন বুধবার বিকেলে তারা সকলে ছাড়া পান।
ওড়িশায় আটকে থাকা এক শ্রমিক সইফুদ্দিন মোমিনের ভাই নাসিম আনসারি বলেন, ‘কাজের জন্য আমাদের এলাকার অনেকেই কটক যান, কেউ কেউ ভুবনেশ্বর যান। গত ২০-৩০ বছর ধরে অনেকে কাজ করছেন ওখানে। আগে কোনও দিন এই ঘটনা ঘটেনি। মহিশাস্থলি গ্রামের ১০ জন ও সুতি থানার বাহাগুলপুর গ্রামের দু’জনকে আটকে রাখা হয়। খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়নি। তথ্য যাচাইয়ের জন্য ওদের কুঁড়েঘরে রেখে দেওয়া হয়েছিল বলে জেনেছি। সবাইকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটকে রাখা হয়।’
শ্রমিকদের দাবি, তাদের কাছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ সমস্ত নথিপত্র রয়েছে। সে সব খতিয়ে দেখেও হয়রানি করছে পুলিশ। অনুপ্রবেশকারী বলে মিথ্যা সন্দেহে বন্দি করে রাখা হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের হস্তক্ষেপে ওই শ্রমিকেরা মুক্ত হয়েছেন। ফরাক্কার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শেখ শামসুদ্দিন বলেন, ‘ওড়িশায় যাদের অবৈধ ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল, ওই রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তাদের সকলকে মুক্ত করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখছি আমরা।’
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে অনেক শ্রমিকরা দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশা, রাজধানী দিল্লি, হরিয়ানাসহ বিভিন্নি রাজ্যে কাজ করতে যান। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অভিযোগ, সেই সব শ্রমিকদেরই বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে আটক করা হচ্ছে এবং বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত জুলাই মাসে ওড়িশায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে অন্তত ৪৪৮ জনকে আটক করে রাজ্যটির পুলিশ। তবে আটক হওয়াদের মধ্যে ৪০৩ জনই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ওড়িশা সরকার।
সূত্র: আনন্দবাজার
এমএইচআর