images

আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৭ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণ ও তীব্র হামলায় একদিনে অন্তত ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কেবল গাজা শহরেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। এই ভয়াবহ হামলায় পুরো গাজা শহর এখন পরিণত হয়েছে ‘আতঙ্কের নগরীতে’।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে গাজার পাড়া-মহল্লাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। অসংখ্য ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছেন এবং যারা আশ্রয়ের সন্ধানে পালাচ্ছেন, তারাও কোথাও নিরাপদ নন। গত ২৩ মাস ধরে চলা এই নির্মম হামলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। ইউনিসেফ (জাতিসংঘ শিশু তহবিল) ইতোমধ্যেই গাজা সিটিকে ‘আতঙ্কের নগরী’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) তাল আল-হাওয়া এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু।

হামলার শিকার হওয়া ইসরা আল-বাসুস বলেন, আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়ল, শরীরে টুকরো এসে লাগল, আমার চার সন্তান ভয়ে চিৎকার শুরু করল।

গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় হামলা সবচেয়ে তীব্র ছিল। তুফাহ পাড়ায় কমপক্ষে আটজন এবং শুজাইয়ায় একটি আবাসিক ভবনে দুইজন নিহত হয়েছেন। জেইতুন এলাকা থেকে একটি পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালালেও হামলা তাদের পিছু ছাড়ছে না। অনেকেই শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে ঘরবাড়ি ও তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হাসপাতালগুলোতে মৃত ও আহতের ঢল নেমেছে। আল-শিফা হাসপাতালের মর্গের মেঝেতে সারি সারি লাশ রাখা আছে। মর্গের বাইরে এক মা তার নিহত সন্তানের কাছে আকুতি করছিলেন, আমাকে ফেলে কোথায় গেলে, বাবা? কেন?

ইউনিসেফের কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই ‘ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরীতে’ আটকা পড়েছেন।

ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা বর্তমানে গাজা সিটির ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, জেইতুন এলাকায় অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান মোতায়েন করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ গাজার পরিস্থিতিও ভয়াবহ। খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া এক গর্ভবতী নারী বলেন, ‘এখানে কোনো গোপনীয়তা নেই, শান্তিও নেই।’

বৃহস্পতিবার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় সাতজন এবং রাফাহতে ত্রাণ নেওয়ার সময় জড়ো হওয়া মানুষদের ওপর গুলিবর্ষণে আরও সাতজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান হামলায় পুরো উপত্যকাজুড়ে ৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

/এএস