গাজা উপত্যকা শাসনে নিরপেক্ষ টেকনোক্র্যাটদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বাধীন জাতীয় প্রশাসন গঠনে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
বুধবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলছে, ‘গত ১৮ আগস্ট মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থাপিত গাজা পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও টেকনোক্র্যাটভিত্তিক প্রশাসন গঠনের প্রস্তাবে আমরা প্রস্তাবে সম্মত। এখন আমরা ইসরায়েলের সাড়ার অপেক্ষা করছি।’
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সেই সঙ্গে আমরা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতেই সম্মত আছি; তবে তার পরিবর্তে ইসরায়েলের কারাগারে এখনও বন্দি থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে হবে। হামাস গাজা পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে রাজি হয়েছে মূলত যুদ্ধবিরতির স্বার্থে। নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গাজা উপত্যকার যাবতীয় ইস্যু পরিচালনা করবে গাজা সংক্রান্ত প্র্রত্যেক বিষয় তাদের দায়িত্বে থাকবে। এর বিনিময়ে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ, সেনবাহিনীর সব সদস্যকে গাজা থেকে প্রত্যাহার, গাজায় খাদ্য ও ত্রাণের প্রবেশের জন্য সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দিতে হবে এবং গাজায় পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হবে।’
এদিকে হামাসের এই প্রস্তাবকে ‘কথার মারপ্যাঁচ’ উল্লেখ করে তাৎক্ষণিকভাবে এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের জন্য জিম্মিদের মুক্তির চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত, এটি হামাসের আরও একটি ‘কথার মারপ্যাঁচ’ যার মধ্যে নতুন কিছু নেই।
এতে আরও হয়, ‘ইসরালের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যেসব শর্ত নির্ধারণ করেছে, সেসব পূরণ হলে তাৎক্ষণিকভাবে এই যুদ্ধ থেমে যাবে। মন্ত্রিসভার নির্ধারিত শর্তগুলো হলো— অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, হামাসকে অবশ্যই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে, গাজাকে অসামরিকীকরণ করতে হবে, গাজার নিরাপত্তা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং সেখানে এমন একটি বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে— যেটি সন্ত্রাসবাদে উসকানি দেওয়া থেকে বিরত থাকবে এবং ইসরায়েলের জন্য কখনও হুমকি হয়ে উঠবে না।’
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, তেল আবিবের অনুমান অনুসারে গাজায় বর্তমানে ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি বন্দী রয়েছেন, যার মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিতে ১০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী রয়েছে, যেখানে তারা নির্যাতন, অনাহার এবং চিকিৎসা অবহেলার শিকার হচ্ছে, যার ফলে অনেকেই মারা গেছেন।
এরআগে গত মাসে বন্দী বিনিময় এবং ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব গ্রহণের ঘোষণা দেয় হামাস, কিন্তু ইসরায়েল এ বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। বিপরীতে গাজা শহর দখলের নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় অনুমোদন করেছে দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা।
নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক, সৌদি আরব এবং ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি নেতানিয়াহুকে এই পরিকল্পনা স্থগিতের আহ্বান জানায়। কিন্তু এসব আহ্বানকে উপেক্ষা করে গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সূত্র: আনাদোলু
এমএইচআর

