আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৫ আগস্ট ২০২৫, ০২:১১ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়ার কাছাকাছি পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে মস্কো। এই চুক্তির ফলে দুই দেশই একে অপরের দিকে তাক করে তাদের স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন স্থগিত রেখেছিল।
সোমবার এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সোভিয়েত আমলে যে পরিস্থিতির কারণে রাশিয়া আইএনএফ চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়েছিল, অবস্থা আর তেমন নেই। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার ভৌগলিক নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এই কারণে রাশিয়া আইএনএফ চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু পরিস্থিতি ইউরোপ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্থল-ভিত্তিক মাঝারি এবং স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রকৃত মোতায়েন করে যাচ্ছে, তাই রাশিয়ার অস্ত্র মোতায়েনের ওপর একতরফা স্থগিতাদেশ বজায় রাখার শর্তগুলোও অদৃশ্য হয়ে গেছে।’
এদিকে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এক এক্স বার্তায় মেদভেদেভ বলেন, ‘রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন সংক্রান্ত চুক্তি থেকে সরে আসা নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা সঠিক। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর রাশিয়াবিরোধী নীতির কারণে এই পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হয়েছে মস্কো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের সকল বিরোধীদের মেনে নিতে হবে। আরও পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করুন।’
The Russian Foreign Ministry's statement on the withdrawal of the moratorium on the deployment of medium- and short-range missiles is the result of NATO countries’ anti-Russian policy.
— Dmitry Medvedev (@MedvedevRussiaE) August 4, 2025
This is a new reality all our opponents will have to reckon with. Expect further steps.
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত আইএনএফ চুক্তির মূল শর্ত ছিল— সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাশিয়া কখনও পরস্পরের দিকে তাক করে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করবে না। তবে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
রাশিয়া তখন থেকে বলে আসছে, ওয়াশিংটন যদি না কোনো উসকানি না দেয়, তারা অস্ত্র মোতায়েন করবে না। তবে গত ডিসেম্বরে রাশিায়র প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও দেশিটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কৌশলগত ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের জবাব দেবে মস্কো।
এরমধেই দিমিত্রি মেদভেদেভের এক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত শুক্রবার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প জানান, তিনি রাশিয়ার কাছাকাছি ‘উপযুক্ত স্থানে’ দু’টি পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
মূলত ট্রাম্প ও মেদভেদেভ সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যাচ্ছেন।
গত ২৮ জুলাই ট্রাম্প হুমকি দেন যদি রাশিয়া আগামী ১০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না করে, তাহলে রাশিয়ার ও তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা দেশে ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা হবে।
প্রতিক্রিয়ায় মেদভেদেভের ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, ‘৫০ বা ১০ দিন...তার (ট্রাম্পের) দুটি জিনিস মনে রাখা উচিত: ১. রাশিয়া ইসরায়েল বা ইরান নয়। ২. প্রতিটি আল্টিমেটাম একধরনের হুমকি এবং যুদ্ধের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এই কৌশল রাশিয়া-ইউক্রেন নয়, বরং ট্রাম্পকে তার নিজের দেশের সঙ্গেই যুদ্ধের পথে টেনে নিতে পারে। এই পথে এগোবেন না।’
সূত্র: আরটি, এনডিটিভি
এমএইচআর