আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৫৯ এএম
সোমবার রাতে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই সময় কাতারের রাজধানী দোহার আকাশে বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে প্রতিহত করার সময় আকাশে আলোর চোখ ধাঁধানো ঝলক ধরা পড়েছে সেই সময়ে তোলা ভিডিওগুলোতে।
কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিকে নিশানা করে ইরান যে হামলা চালিয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। কাতার সরকার জানিয়েছে, ইরানের তরফে চালানো হামলায় কারও মৃত্যু হয়নি বা কেউ আহতও হননি। ওই ঘাঁটিটি আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল।
প্রথমে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং পরে দেশটির সেনাবাহিনী ওই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডস-এর এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইরান তার সার্বভৌমত্বের ওপর চালানো কোনো হামলার জবাব না দিয়ে থাকবে না’ এবং ‘এ অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিগুলো তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) শক্তি নয়, বরং দুর্বলতা।’
ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে নিশানা করে হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ তাদের (ইরানকে) কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। পাশাপাশি, তেহরানের নেতাদের ওই অঞ্চলে অস্থিরতার অবসানের জন্য কূটনৈতিক মাধ্যমের বিষয়ে সম্মত হওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন
মার্কিন সামরিক ঘাঁটির ওপর ইরানের হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া ‘খুবই দুর্বল' ছিল। ‘ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া খুবই দুর্বলভাবে দিয়েছে, যা আমরা আশা করেছিলাম এবং খুবই কার্যকরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে।’ হামলার আগে সতর্ক করে দেয়ার জন্যও তিনি ইরানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরান ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার ১৩টি ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে এবং আরেকটি অন্যদিকে চলে গেছে।
ওই হামলায় কোনো আমেরিকানের ক্ষতি হয়নি এবং ‘তেমন কোনো সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতিও হয়নি’, তিনি বলেছেন। এমনকি কাতারের কোনো বাসিন্দাও নিহত বা আহত হয়নি, জানান ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যরা কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল?
ইরান যে কাতারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে সন্দেহ করছে, সে বিষয়ে সোমবারই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে কাতার জানিয়েছিল, তারা সাময়িকভাবে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিচ্ছে। এর ঠিক আগেই, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাতারে নিজেদের দেশের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কথা বলেছিল।
তবে, কোনোরকম হামলা যে আসতে চলেছে, সে বিষয়ে অবশ্য এই সতর্কবার্তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, তারা ‘প্রচুর সতর্কতা অবলম্বন করে’ এই আদেশ জারি করেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য জানায়, মার্কিন নেতৃত্বের জারি করা আদেশের অনুকরণেই তারাও এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে হামলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে বিবিসি জানতে পারে ওই ঘাঁটিতে ‘বিশ্বাসযোগ্য হুমকি’ রয়েছে।
অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায় ইরান সম্ভাব্য নিশানার জন্য কাতারের দিকে তাক করে তাদের 'মিসাইল লঞ্চার' মোতায়েন করেছে।
'ফ্লাইট ট্র্যাকিং' ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে, উৎক্ষেপণের আগেই বিমানগুলি অন্য বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
'ফ্লাইটরাডার২৪' জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে দোহায় ১০০টি ফ্লাইট ছিল। হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক ট্র্যাফিকের নিরিখে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ব্যস্ততমগুলির মধ্যে একটি। প্রতিদিন এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রায় ১৪০,০০০ যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন।
বাহরাইন ও কুয়েতসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশও তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। সূত্র: বিবিসি
জেবি