ঢাকা মেইল ডেস্ক
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৮ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। দ্বিতীয় বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের এই প্রার্থী ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। মার্কিন মুলুকে ক্ষমতার এই পালাবদলে হিসাব-নিকাশ চলছে বিশ্বজুড়েই। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। সরকার পরিবর্তনে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন নীতি কী হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নানা মহলে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। টানা সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে বারবার অভিযোগ করে আসছে ক্ষমতাচ্যুতরা। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডেমোক্রেটদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে মনে করা হয়। এই অবস্থায় ডেমোক্রেট প্রার্থীকে পরাজিত করে রিপাবলিকান প্রার্থীর বিজয়ে বেশ উল্লসিত আওয়ামী লীগ শিবির।
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশে-বিদেশে ছন্নছাড়া অবস্থায় থাকা দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বাংলাদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এতে বেকায়দায় পড়তে পারে ইউনূস সরকার। ফলে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেতে পারে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও ভালো সম্পর্ক। সেটাও আওয়ামী লীগ তাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে।
যদিও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের বিদেশ নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। বাংলাদেশের ব্যাপারেও তাদের নীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন আসার পরেও বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং তরুণ প্রজন্ম ও জনগণ পুরনো জায়গায় ফেরত যেতে যায় না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নীতিমালা ও বাংলাদেশের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যে অবস্থায় আছে সেটাকে অস্থিতিশীল করার মতো কোনো কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। ট্রাম্প প্রশাসন আসার পরেও বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করি না।
এই কূটনীতিক বলেন, তারা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অগ্রসর দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায়। আঞ্চলিকভাবে অবদান রাখতে সক্ষম এমন বাংলাদেশ তারা চায়। আর বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতায় তাদের এসব চাহিদার সাথে সাযুজ্য আছে। এটা কেন তারা নষ্ট করবে আমি বুঝি না। তাছাড়া চলমান সংস্কার কার্যক্রমকেও তারা সমর্থন দিচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুটি বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ হুটহাট সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের বিষয়ে নীতি পরিবর্তন করে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে অস্বীকার করার কিছু নেই এবং সে কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও এটিকে ব্যবহার করে অনেক সময় সুবিধা নিতে চায়। তারা জনগণের মনে একটা ধারণা দিতে চায় যে, শক্তিশালী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন সমর্থন তাদের দিকে আছে।
এই বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন সমর্থন মনস্তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো পরিবর্তন বা ঘটনায় এদেশেও কোনো পক্ষ উজ্জীবিত হয় আবার কোনো পক্ষ হতাশ বোধ করে। এবারেও তাই হচ্ছে।

এদিকে ট্রাম্পের শপথ ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন, যাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনায় তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় দল ও সরকারের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখা সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসিকে বলছেন, তারা মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যাদের সমর্থন যুগিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন সেটি করবে না বলেই তারা মনে করেন।
আরাফাত বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমর্থকদের জন্য যেমন অস্বস্তির কারণ হবে, তেমনি এটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যাদের পছন্দ করে না- তারা বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে বিশেষ পছন্দ করেন। ফলে আমরা মনে করি ইউনূস সাহেব বাইডেন প্রশাসনের যেমন সমর্থন পেয়েছেন সেটি তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে পাবেন না।
জেবি