images

আন্তর্জাতিক

সরকার গঠন করতে পারবে ইমরানপন্থী স্বতন্ত্ররা, আইন কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫৬ এএম

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী— এখন পর্যন্ত ২৫০ আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পিটিআই, অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমর্থিত। ৭১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তার দল পেয়েছে ৫৩ আসন। এছাড়া এমকিউএম ১৭ আসনে এবং অন্যান্য দল ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে। 

জানা গেছে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের। ২৬৬ আসনের একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলিতে নিহত হওয়ায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৬৫ আসনে। ফলে দেশটির ক্ষমতার মসনদে কারা বসছেন সেই হিসাব কষতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১৫ আসনের ফলাফলের জন্য। প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সরকার গঠন করতে পারবে ইমরানপন্থী স্বতন্ত্ররা, আইন কী?

কী করতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা?
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। তবে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তারা জাতীয় পরিষদে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৪টি আসন পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।

বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, স্বতন্ত্র এই প্রার্থীরা যদি কোনোভাবে সরকারে থাকেন, তাহলে ইমরানের কারাদণ্ডের সাজা বা তার সরকারি দায়িত্বে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তাকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার গঠনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানপন্থী স্বতন্ত্রদের ফলাফলের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এতে তারা ইমরান খানের রাজনীতিকে নতুন জীবন দিতে পারবে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।

যদিও কেউ কেউ বলছেন, তাত্ত্বিকভাবে সংসদ সদস্যরা দলমত নির্বিশেষে সরকার গঠন করতে সক্ষম। পিটিআই যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি, সেক্ষেত্রে দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা অন্য কোনো দলে যোগদান না করেও নিজেরা সংসদীয় স্বাধীনতা বজায় রাখার পথ বেছে নিতে পারেন।
 
সেক্ষেত্রে এটা তাদের সরকার গঠনের সুযোগ করে দিতে পারে। যদি তারা সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন তথা ম্যাজিক ফিগার পূরণ করতে পারেন। অর্থাৎ ২৬৬ আসনের মধ্যে ১৩৪টি আসন পেতে হবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই যদি ঘটে, তাহলেও তা হবে অত্যন্ত দুর্বল একটা সরকার। কারণ স্বতন্ত্র সাংসদ যেকোনো মুহূর্তে ক্ষমতাসীন জোটকে পরিত্যাগ করতে পারেন। যার ফলে ভেঙে যেতে পারে সরকার।
 
স্বতন্ত্র থাকার আরেকটি অসুবিধা হলো ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংরক্ষিত আসনের যে কোটা রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত হবেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নারী ও সংখ্যালঘু মিলিয়ে ৭০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের জন্য এবং ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ। যে দল সরকার গঠন করবে তাদের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে এগুলো বণ্টন করা হয়।
 
পিটিআই দল হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ না পাওয়ায় দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সংরক্ষিত আসনের এই কোটার সুবিধা পাবে না। এ অবস্থায় পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, তার জন্য আরও ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বড় প্রভাব রয়েছে। সে হিসেবে এবার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছিল, এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী নওয়াজ শরিফ। ভোটের দিনও সরকার গঠনের বিষয়ে ব্যাপক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। লাহোরে একটি কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচন শেষ হলেই আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।’ তবে শেষ পর্যন্ত একক দল হিসেবে সর্বাধিক আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তার দল পিএমএল–এন।

সেদিক দিয়ে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকা এবারের নির্বাচনে বড় চমক। ২০১৮ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে পাকিস্তানে ক্ষমতায় বসেছিল পিটিআই। সামরিক বাহিনীর বিরাগভাজন হয়ে চার বছরের মাথায় দলটির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন হয়। এরপর রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। মামলা–হামলা ও দমনপীড়নের মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হয় পিটিআই নেতাদের।

আরও পড়ুন
এগিয়ে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, কীভাবে হবে সরকার গঠন?

‘জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে’
ইমরান খানের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গত রাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি তার একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, জাতি নজিরবিহীনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে পিটিআই বিজয়ী হয়েছে।

জানা গেছে, পিটিআইয়ের নেতারা ইমরান খানের সঙ্গে নির্বাচনের ফল নিয়ে আলোচনা করতে আজ শনিবার আদিয়ালা কারাগারে যাবেন।

এদিকে পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে জোট গড়বে না বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। গতকাল জিও নিউজকে তিনি বলেন, ‘পিএমএল-এন ও পিপিপির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি না।’

জোট সরকার গড়তে চান নওয়াজ
নির্বাচনের ফল প্রকাশের মধ্যেই গতকাল লাহোরে পিএমএল-এনের প্রধান কার্যালয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পিএমএল-এন এককভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে সামনে এসেছে।

তবে সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পরিষদে এককভাবে ১৩৪টি আসন পায়নি পিএমএল-এন। তাই জোটগতভাবে সরকার গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে নওয়াজ বলেন, পাকিস্তানে বর্তমানে যেসব সংকট রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।

নওয়াজ শরিফ জানান, জোট সরকার গঠনের জন্য তাঁর ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ পিপিপির কো–চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি, জমিয়ত উলেমা ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) নেতা ফজলুর রেহমান ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) নেতা খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানায়, গত রাতেই নওয়াজ বৈঠক করেছেন আসিফ জারদারির সঙ্গে। তবে বৈঠকের বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এইউ