আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫১ পিএম
বিকাশমান অর্থনৈতিক দেশের জোট ব্রিকসের সদস্য হতে চায় পাকিস্তান। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত যেখানে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সেখানে পাকিস্তানের এতে যোগ দেওয়া কতটা কঠিন হবে সেটি নিয়ে ভাবছেন বিশ্লেষকরা। ভারত বাধা কাটাতে মস্কোর সহায়তা চেয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান এরই মধ্যে ব্রিকসের সদস্য পদ লাভের জন্য আবেদন করেছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি মস্কোয় নিযুক্ত পাকিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি বলেন, বিষয়টি রাশিয়ার সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে। আগামী বছর রাশিয়ার সভাপতিত্বে ইসলামাবাদ জোটটির সদস্য হতে পারবে বলে আশা করছে।
বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচটি দেশ নিয়ে গঠিত ব্রিকস। যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। সংস্থাটির সদস্যপদের আনুষ্ঠানিক আবেদনের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালোচ ব্রিকসকে ‘গুরুত্বপূর্ণ দলীয় উন্নয়নমূলক দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ৫ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধ!
গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মমতাজ জাহরা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ব্রিকসে যুক্ত হতে পারলে পাকিস্তান আন্তজাতিক সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা আরও আশা করছি ব্রিকস অবশ্যই পাকিস্তানের আবেদনকে গুরুত্ব দেবে। তিনি আরও বলেন, ব্রিকসের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
মস্কোয় নিযুক্ত পাকিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত জানান, পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থার অংশ হতে চায়। এজন্য ব্রিকসের সকল দেশগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে এক্ষেত্রে রাশিয়ার সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
অনেক বিশ্লেষক ব্রিকসকে মার্কিন ও পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদের বিকল্প হিসেবে দেখেন। ব্রিকসের সর্বশেষ সম্মেলন গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে প্রায় ৪০টি দেশ ব্রিকসে যোগদানের আগ্রহ জানায়।
তিনদিনের ওই সম্মেলনে আরও ছয়টি দেশ আগামী বছর থেকে ব্রিকসে যোগ দিচ্ছে বলে জানানো হয়। দেশগুলো মধ্যে রয়েছে- মিশর, ইউথোপিয়া, আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান।
আরও পড়ুন: নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে বর্জন করব: বিলাওয়াল ভুট্টো
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কমিটির সিনেটর মুশাহিদ হোসাইন সাঈদ দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন আঞ্চলিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। ফলে ব্রিকসে যোগদানে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকের দৃষ্টিতে ব্রিকস এমন একটি জোট, যারা নীতিমালাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের নেতৃত্বাধীন জোটকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
পাকিস্তানের বাধা ভারত
ব্রিকসের নতুন সদস্যপদ পেতে গেলে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। আর সেখানেই বাধা হিসেবে রয়েছে ভারত। এটি উল্লেখ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক মুহাম্মদ ফয়সাল মনে করেন, পাকিস্তান ব্রিকসে যোগ দিতে চাইলেও কাজটি তাদের জন্য সহজ হবে না।
মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, পাকিস্তানে সামনে যে পথটি খোলা আছে, তা একেবারেই চ্যালেঞ্জের এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। নতুন সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রাজনীতি আছে। পাকিস্তানের বিষয়টি একেবারেই ভারতের বিরোধিতার সঙ্গে জড়িত। ভারত-চীন সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে, তার ওপরই ভারতের বিরোধিতা করা না করার বিষয়টি নির্ভর করছে।
গত বছরের জুনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক কার্যালয় জানায়, চীনে ব্রিকস নেতৃত্ব সম্মেলনের ফাঁকে আয়োজিত একটি নীতিমালাসংক্রান্ত সংলাপ অনুষ্ঠানে পাকিস্তান অংশ নিতে পারেনি। কারণ একটি সদস্যদেশ এতে বাধা দেয়।
আরও পড়ুন: ভারতে টানেলে আটক শ্রমিকদের উদ্ধারে ৩০ দিন লাগবে!
নাম উল্লেখ না করলেও বোঝা যায় যে পাকিস্তানকে বাধা দেওয়া দেশটি ভারত। তবে পাকিস্তানের কূটনীতিকদের আশা, অংশগ্রহণমূলক নীতির ভিত্তিতে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতের আলোচনাগুলো হবে।
পাকিস্তান সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন মুশাহিদ হুসেন সাইদ ভারতের অবস্থানের ব্যাপারে আক্ষেপ করে বলেন, ক্রিকেট, কূটনীতি কিংবা রাজনীতি—যা-ই হোক না কেন, ভারত সব সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকট দেখিয়ে দিয়েছে যে বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের অংশ না হয়ে মার্কিন কিংবা ইসরায়েলি শিবিরের দিকে বেশি ঝুঁকেছে ভারত।
ভারত ইতিহাসের ভুল অংশে অবস্থান করছে বলেও মনে করেন হুসেন সাইদ।
একে