images

আন্তর্জাতিক

গাজায় হাসপাতাল ঘিরে ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১১ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৩০ পিএম

গাজার সব প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা, আল-কুদস, আল-রানতিসি এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের একেবারে কাছে এখন ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। শুক্রবার সারাদিন ধরে হাসপাতালগুলোর আশপাশে এবং ভেতরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করে আসছে যে, আল-শিফা হাসপাতালের নিচের টানেলে হামাস অবস্থান করছে, যা অস্বীকার করেছে হামাস। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ইসরায়েলের এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

এক নারীর করা একটি ভিডিও বিবিসি যাচাই করে দেখেছে যে, সেটি গাজা শহরের আল-রানতিসি হাসপাতালের ভেতরে করা। সেখানে তিনি বলছেন যে এই শিশু হাসপাতালটি চারদিকে ট্যাঙ্ক দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং এখানে আশ্রয় নেয়া সবাইকে চলে যেতে বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, উত্তর গাজার এই হাসপাতালগুলো নিজেদের সামর্থ্যের ‘চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে’ এবং হাজার হাজার লোকের জীবন এখান ঝুঁকিতে রয়েছে।

আল শিফা হাসপাতালের ডাক্তার সালামিয়া পরিস্থিতিকে ‘ভয়ংকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি তার চারদিকে গুলি এবং বোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন বলে জানান। অন্যদিকে গাজার আরেকটি হাসপাতাল আল-নাসর থেকে সাদা পতাকা হাতে শিশু ও বয়স্কদের বের হতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে গাজার যুদ্ধ!

হামাস চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে গাজায়, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজারই শিশু। অন্যদিকে ইসরায়েল তাদের মৃত্যুর তালিকা সংশোধন করে প্রকাশ করেছে। এতদিন তারা মৃতের সংখ্যা ১৪০০ বললেও শুক্রবার দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায় আসল সংখ্যা ১২০০ জন।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লায়র হাইয়াত বলেন, ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার পরপরই যারা মারা যায় তাৎক্ষণিক তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এবং “এখন তারা মনে করে ওগুলো ইসরায়েলিদের নয় বরং হামাস সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ”।

গাজা নিয়ে কোন প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কয়েক সপ্তাহ ধরে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত তাতে খুব বেশি আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি হতাশা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে। কারণ তারা গাজা নিয়ে কোন প্রস্তাব পাসে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। জাতিসংঘে ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কোনরকম যুদ্ধবিরতিরও বিপক্ষে।

এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের ১২ জন সদস্যের সমর্থিত আরেকটা প্রস্তাবেও ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র, কারণ তারা মনে করে সেখানে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট শক্ত ভাষা ব্যবহার করা হয়নি।

এছাড়া রাশিয়া ও চীন যুক্তরাষ্ট্রের একটা প্রস্তাবে ভেটো দেয়। তারা বলে যে এটি যুদ্ধের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়ার সবুজ সংকেত হিসেবে কাজ করবে। সবমিলে নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্ত চারবার কোন ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হল। বিষয়টি নিয়ে পুরো নিরাপত্তা পরিষদ এখন বিভক্ত।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এই বিশেষ বৈঠকটি ডেকেছিল। কারণ তারা গাজার হাসপাতালে হামলা ও চিকিৎসা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়া নিয়ে তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরে।

আরও পড়ুন: মামলা, বিক্ষোভের মধ্যেও ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাল অস্ট্রেলিয়া

যে বক্তব্যের শেষে ডব্লিউএইচও এর  প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, বর্তমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে আরও একবার নিরাপত্তা পরিষদকে এক হতে হবে। তিনি কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই কাউন্সিল যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটি আর পালন করতে পারছে না, তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহবান জানান।

এর আগে ইসরায়েল উত্তর গাজায় প্রতিদিন চার ঘণ্টার সামরিক বিরতি শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, এটা খুবই ‘স্থানীয় এবং সামান্য একটা পদক্ষেপ’ যা তাদের ‘যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরাবে না’।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দখলদার ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিক। গাজায় প্রতি দশ মিনিটে একজন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস।

শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় শহরে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৬ জন শিশু। গাজায় নিহত নারীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৭ জন।

একে