আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৮ এএম
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার অন্যতম আল শিফা হাসপাতাল। গত ৪৮ ঘণ্টায় বন্ধ হয়ে গেছে আরও ৩টি হাসপাতাল। এছাড়া আল কুদস হাসপাতালের আইসিইউতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলোর একটি ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালও বিদুৎ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার আরেকটি হাসপাতাল আল কুদসের আইসিইউ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। রোগীতে পরিপূর্ণ থাকা আল শিফা হাসপাতালও জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান শুক্রবার বলেছেন যে, গাজার অর্ধেক হাসপাতালই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনি উপত্যকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চূড়ান্ত সীমায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: হামাসের যুদ্ধ কৌশল, অবাক বিশ্ব
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে তিনি বলেন, 'গাজার ৩৬টি হাসপাতাল এবং এর দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অর্ধেকই কাজ করছে না। যেগুলো কাজ করছে তারা তাদের সামর্থ্যের বাইরে কাজ করছে।'
তিনি বলেন, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চূড়ান্ত সীমায় রয়েছে। তবুও কোনো না কোনো ভাবে জীবন রক্ষার জন্য লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের এখন ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জ্বালানির প্রচণ্ড প্রয়োজন। সেখানে প্রতি দশ মিনিটে একটি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে সেখানে কোথাও এবং কেউ নিরাপদ নয়।'
ডব্লিউএইচও প্রধানের মতে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চারটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে জ্বালানির অভাবে। হাসপাতালগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩০ শয্যা ছিল। তবে এর চেয়েও অনেক বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত শতাধিক জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের মহাপরিচালক মারওয়ান জিলানি বলেছেন, আল-কুদস হাসপাতালে তার সহকর্মীরা তাকে দুই ঘণ্টা আগে ফোনে বলেছিলেন যে, হাসপাতালে সরাসরি গুলি চালিয়ে একজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে।
জিলানি গাজায় আরও মৃত্যু ও দুর্ভোগ রোধ করার জন্য কাউন্সিল সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যোগ করেছেন যে, আল-কুদস হাসপাতালে ১৪ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক রয়েছে এবং আরও ৪০০ জন অসুস্থ ও আহত।
তিনি বলেন, 'জ্বালানির অভাবে দুই দিন আগে প্রধান জেনারেটরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে আমরা আইসিইউতে থাকা রোগী এবং ইনকিউবেটরে থাকা শিশুদের হারানোর গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি।'
আরও পড়ুন: গাজায় বাড়ছে মৃত্যু, ইসরায়েলের নতুন লক্ষ্য খাবারের দোকান
শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় শহরে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৬ জন শিশু। গাজায় নিহত নারীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৭ জন।
গাজায় আঘাতপ্রাপ্ত অসংখ্য ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কোনো রকম চেতনানাশক ছাড়াই অস্ত্রোপচার করছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রবেশ করে এক আকস্মিক হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। এতে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। এ ছাড়া আরও দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। এ ঘটনার পর থেকেই গাজার ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সম্প্রতি জাতিসংঘ বলেছে যে, গাজা শিশুদের কবরস্থান হয়ে উঠছে। এটি একটি যুদ্ধবিরতির দাবিকে বাড়িয়ে তুলছে। এর আগে জাতিসংঘের সংস্থার প্রধানরা গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরল যৌথ আবেদন করেছেন। জাতিসংঘের ১৮টি সংস্থার নেতারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় মৃতের সংখ্যায় হতবাক হয়েছেন তারা। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংস্থাগুলোর প্রধানরা।
সূত্র: আল জাজিরা, আনাদুলু এজেন্সি
একে